একবার সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্ খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী আজমিরী, সানজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি দিল্লীতে তাশরীফ আনলেন। উনার একান্ত মুরীদ ও প্রধান খলীফা সুলতানুল আরিফীন খাজা কুতুবুদ্দীন বখ্তিয়ার কাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হুজরায় তিনি অবস্থান গ্রহণ করলেন। তখন স্বীয় শায়েখ উনার নিকট হযরত বখ্তিয়ার কাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরজি পেশ করলেন, হে শায়েখ আপনি যদি অনুমতি দেন আমি আপনাকে আমার একজন একান্ত স্নেহের মুরীদকে স্বাক্ষাত করাবো। সে অনেক রিয়াজত মাশাক্কাতে মশগুল থাকে। আমি জানি সে আমাদের এই সিলসিলাকে সমুজ্জ্বল রাখবে। হযরত খাজা চিশ্তী আজমিরী, সানজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্মত হলেন।
হযরত খাজা বখতিয়ার কাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিন স্বীয় শায়েখ উনাকে নিয়ে গেলেন শাইখুল ইসলাম হযরত শায়খ ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হুজরা শরীফে। সেখানে ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মাঝখানে দাড় করিয়ে হযরত খাজা চিশ্তী আজমিরী, সানজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত খাজা বখতিয়ার কাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা উভয়ে উনার জন্য অনেক দোয়া করলেন এবং অনেক রূহানী ফয়েজ দিলেন।
অতঃপর, হযরত খাজা বখতিয়ার কাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মুরীদ বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে স্বীয় শায়েখ উনার দিকে ইশারা করে বললেন, “তোমার দাদা পীর ছাহেব উনাকে কদমবুচী করো”। তখন বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় শায়েখ হযরত খাজা বখতিয়ার কাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কদমে বুছা দিলেন। শায়েখ আবার একই নির্দেশ করলেন এবং মুরীদ আবারও একই কাজ করলেন। অর্থাৎ, হযরত খাজা বখতিয়ার কাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মুরীদ বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে তিনবার উনার দাদা পীর ছাহেব হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ, চিশতী আজমিরী, সানজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কদমবুচী করতে বললেন তিনি প্রত্যেকবারই নিজ শায়েখ হযরত খাজা বখতিয়ার কাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কদমবুচী করলেন।
তখন হযরত খাজা বখতিয়ার কাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “আমি তোমাকে বার বার বলছি, তোমার দাদা পীর ছাহেব উনাকে কদমবুচী করো, আর তুমি বার বার আমাকে কদমবুচী করছো। এর কি মানে?” জবাবে বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “হে আমার শায়েখ আমি তো এখানে আপনার একজোড়া কদম মুবারক ব্যতীত আর কিছুই দেখছিনা! আমি আর কোথায় বুছা দিবো!”
হযরত ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এহেন হাল দেখে সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্ খাজা চিশ্তী আজমিরী, সানজিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “হে বখতিয়ার কাক্বী, তোমার এ মুরীদ তো দেখি বাজপাখির ন্যায়। ওর নজর তো সম্মানিত আরশে আজিমে। তুমি কেনো ওকে এখনও ধরে রেখেছো, তাকে খিলাফত দিয়ে দাও। সে মঞ্জিলের দরজায় পৌঁছে গেছে, সেখানে এক ভিন্ন দ্বিতীয়র কোন অস্তিত্ব নেই। তাই তোমাকে ভিন্ন আমি তার দৃষ্টিতে কেন আসবো!” সুবহানাল্লাহ!
পীর সাহেব হচ্ছেন মুরীদের জন্য শ্রেষ্ঠতম নিয়ামত। মুরীদের অন্তরের কানায় কানায় বিরাজ থাকবে স্বীয় পীর সাহেবের মুহব্বত। যার জজবা থাকবে শিরা-উপশিরা, ধমনীতে, রক্তের প্রতিটি কণায়। উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া সব সময় উদ্ভাসিত হবে উনার মুখচ্ছবি।
এরূপ অবস্থাকে আফজালুল আওলিয়া, মাহবুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী, সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, শায়খ আহমাদ ফারুকী সিরহিন্দী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি “কাল্বের ফানা” বলে অভিহিত করেছেন। যা মা’রিফাত-মুহব্বত লাভের প্রথম পদক্ষেপ।
সুতরাং স্বীয় পীর সাহেব ভিন্ন অন্য কারো গুণাবলী বর্ণনা করা বা দেখার সময় কোথায়? নিজ পীর সাহেবের সম্মুখে অন্যের সানা-সীফাত বর্ণনা করার অর্থই হচ্ছে- স্বীয় পীর সাহেবের উপর তাকে প্রাধান্য দেয়া, পীর সাহেবের চেয়ে তাকে বেশী মুহব্বত করার বহিঃপ্রকাশ। আর এ ধরনের কাজ তাসাউফে একটি বড় রকমের নির্বুদ্ধিতা।
মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যেনো আমাদেরকে আমাদের শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার কদম মুবারকের প্রতি সেই বাজপাখির দৃষ্টি দান করেন, যে দৃষ্টি কখনই তার লক্ষ্যবস্তু থেকে চ্যুত হয় না। আমীন!
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন