পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ ও পবিত্র নাম মুবারক:
সাইয়্যিদুশ শুহাদা, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৩য় হিজরী সনের পবিত্র ১৫ই শা’বান শরীফ, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার), বাদ-আছর পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করে সমগ্র কুলকায়িনাতবাসীকে রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত ও নাজাত মুবারক দানে ধন্য করেন। সুবহানাল্লাহ! পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের পরপরই সম্মানিত নানাজান নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে উনার সম্মানিত পিতাজান সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞেস করেন, পবিত্র আওলাদ আলাইহিস সালাম উনার নাম মুবারক কি রেখেছেন?
: জ্বি ..... উনার নাম মুবারক ‘হারব’ রাখবো বলে ভেবেছি।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন বলেন, না...উনার নাম মুবারক ‘ইমাম হাসান’ আলাইহিস সালাম। যাঁর অর্থ: ‘উত্তম থেকে উত্তমতম’। সুবহানাল্লাহ! এর আগে সমগ্র আরবে আর কেউই নিজ সন্তানের জন্যে এ নাম রাখেনি। এ নাম মুবারক উনার সাথে তাদের পরিচয়ও ছিলো না।
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
حضرت الـحسن عليه السلام وحضرت الـحسين عليه السلام اسـمان من اهل الـجنة
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের এই পবিত্রতম নাম মুবারক দুটি পবিত্র জান্নাতী নাম মুবারকসমূহের অন্তর্ভুক্ত।” সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)
পবিত্র আকীকা মুবারক:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘চুল মুবারক’ কাটিয়ে সমপরিমাণ রূপা ছদকা করে দিতে নির্দেশ মুবারক দেন। আর সপ্তম দিবসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র আকীকা মুবারকের উদ্দেশ্যে মোটাতাজা দুটি দু’ম্বা জবাই করেন। ধাত্রী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে ভেড়ার একটি রান দেন। তারপর তিনি উনার মুবারক হাত দিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাথা মুবারক উনার মধ্যে সুগন্ধি মুবারক মেখে দেন। সুবহানাল্লাহ!
উনার পবিত্রতম দুধ মা:
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের পরে হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আহলিয়া হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনিই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্রতম দুধ মুবারক পান করান।
তিনি বলেন, একদিন আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম কোল মুবারক উনার মধ্যে দেই। কোল মুবারক উনার মধ্যে দেয়া মাত্রই তিনি ইস্তিঞ্জা মুবারক করে দেন। তখন আমি উনার কাঁধ মুবারক উনার উপর আলতোভাবে তথা হালকাভাবে আমার হাত মুবারক রাখলাম। এ দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বলেন, আমার আওলাদ আলাইহিস সালাম উনাকে আপনি ব্যথা দিলেন! মহান আল্লাহ পাক আপনার উপর ইহসান করুন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কি পরিমাণ মুহব্বত মুবারক করতেন তা ভাষায় বর্ণনাতীত।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-
عَنِ حضرت البَرَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَـى عَنْهُ قَالَ رَاَيَتُ النَّبِـىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَ حضرت الْـحَسَنُ بْنُ عَلِىٍّ كرم الله وجهه عليهما السلام عَلٰى عَاتِقِهٖ يَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْ اُحِبُّه فَاَحِبَّه
অর্থ: “হযরত বারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি যে, তিনি হযরত ইমাম হাসান ইবনে আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে নিজের কাঁধ মুবারক উনার উপর রেখে বলছেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আমি উনাকে মুহব্বত করি, আপনিও উনাকে মুহব্বত করুন।” (মুত্তাফাকুন আলাইহি শরীফ)
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীমাহীন ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم حامل حضرت الحسن بن حضرت علي عليهما السلام على عاتقه فقال رجل نعم المركب ركبت يا غلام فقال النبي صلى الله عليه وسلم ونعم الراكب هو
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইমাম হাসান ইবনে হযরত আলী আলাইহিমাস সালাম উনাকে নিজের কাঁধ মুবারক উনার উপর বসিয়ে রেখেছিলেন। তখন এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে আওলাদ তথা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম! কত উত্তম কাঁধ মুবারক উনার মধ্যেই না আপনি আরোহণ করেছেন? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তিনিও তো অতি উত্তম আরোহী! সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
গঠনপ্রকৃতি মুবারক উনার দিক থেকে তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-
عن حضرت أنس رضى الله تعالى عنه قال لم يكن أحد أشبه بالنبي صلى الله عليه وسلم من حضرت الحسن عليه السلام بن حضرت علي عليه السلام
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার থেকে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ ছূরত মুবারক অন্য কেউই ছিলেন না। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ)
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীমাহীন ফযীলত সম্পর্কে আরো বর্ণিত আছে। হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যতবার আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনাকে দেখেছি, ততবার আমার দু’চোখ মুবারক দিয়ে অশ্রু ঝরেছে। কারণ একদিন প্রিয় নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফ থেকে বাইরে আসেন। আমি তখন মসজিদে। এসে আমার হাত মুবারক ধরে আমার শরীর মুবারক-এ ভর দিয়ে চলতে থাকেন। চলতে চলতে আমরা ‘কাইনুকা বাজারে’ এসে পৌঁছি। সেখানে পৌঁছে তিনি ঘুরে ফিরে বাজারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখে ফিরে আসেন। সঙ্গে আমিও ফিরে আসি। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে- আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আমার আওলাদ আলাইহিস সালাম উনাকে নিয়ে আসুন।’
একটু পর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোল মুবারকে দেয়া হয়। এ সময় তিনি কোল মুবারকে বসে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাড়ি মুবারক ধরে নাড়তে থাকেন। অতঃপর উনার মুখ মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুখ মুবারক উনার সাথে মিলিয়ে দেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اللهم انى احبه و احب من يحبه
“আয় আল্লাহ পাক! হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনাকে আমি মুহব্বত করি এবং উনাকেও মুহব্বত করি যিনি উনাকে মুহব্বত করেন।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যমেই নবী পরিবার ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবেন :
এ প্রসঙ্গে স্পষ্টভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عن حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كل سبب و نسب منقطع يوم القيامة الا سببى ونسبى..... كل ولد اب فان عصبتهم لابيهم ماخلا ولد حضرت فاطمة عليها السلام فانى انا ابوهم و عصبتهم-
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি নবীজী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি ক্বিয়ামতে আমার বংশ পরম্পরা ব্যতীত অন্য সব বংশ বন্ধ হয়ে যাবে প্রত্যেক সন্তানের সম্বন্ধ তাদের পিতার সাথে হয়। কিন্তু উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্রতম দু’নূরী আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনাদের পবিত্রতম পূর্ববংশীয় পিতা আমিই এবং উনাদের পূর্বপুরুষও আমি।” (তবারানী শরীফ)
* সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম ইমামতিতে আমরা পবিত্র ছলাত আদায় করতাম। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াবী দৃষ্টিকোণ থেকে অল্প বয়স মুবারকে ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি কখনো কখনো পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করতেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র নামাযরত অবস্থায় যতবার সিজদা মুবারক-এ যেতেন, ততবার সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাঁধ মুবারক-এ এবং পিঠ মুবারক উনার মধ্যে উঠে যেতেন। এমতাবস্থায় সিজদা মুবারক থেকে উঠার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে প্রথম নামাতেন, অতঃপর ধীরে ধীরে স্বীয় মাথা মুবারক উঠাতেন। উপস্থিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলতেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার সাথে এমন মুহব্বত মুবারকে দেখি যা অন্য কারো সঙ্গে এরকম মুহব্বত মুবারকে দেখি না! সুবহানাল্লাহ!
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি দেখেছি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন সিজদারত। এসেই তিনি সোজা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিঠ মুবারক উনার উপর উঠে বসেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওইভাবেই থাকেন। যতক্ষণ তিনি নিজে পিঠ মুবারক থেকে নেমে না গেছেন; নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে নামাননি। আবার কখনো দেখেছি রুকু মুবারক অবস্থায় এসেছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন দু’পা মুবারক ফাঁক করে দিয়েছেন, তিনি অপর দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের প্রতি খুব খেয়াল রাখতেন। কখনো কখনো এমনও দেখা গেছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুতবা মুবারক দিচ্ছেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা মানুষের মাঝখান দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে এগিয়ে আসছেন। আসার সময় হোঁচট খাচ্ছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন খুতবা মুবারক বন্ধ করে দিয়ে মিম্বার শরীফ থেকে নেমে যেতেন। গিয়ে উনাদের উঠিয়ে নিয়ে এসে একেবারে নিজের সামনে বসাতেন। সুবহানাল্লাহ!
শুধু তাই নয়; সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদত মুবারক এতই নরম ছিলেন তা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। একদিনের ঘটনা- কোনো ব্যক্তি উনার প্রতি খারাপ ব্যবহার করলে তিনি তার প্রতি রূঢ় হতেন না। একদিন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মদীনা শরীফ-এ একটি বাজারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় একজন সিরীয় ব্যক্তি উনার মহান ব্যক্তিত্ব দেখে উনার পরিচয় জানতে চাইলে লোকেরা বললো, ইনি ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম। এতে লোকটি উত্তেজিত হয়ে গেল এবং উনার কাছে এসে উনাকে গালাগালি করতে লাগলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শান্তভাবে তার গালমন্দ শুনলেন। যখন সে থামলো তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে তুমি আমার সঙ্গে আসো এবং আমার সঙ্গেই থাকো, এ বলে অনেক উপঢৌকনও হাদিয়া মুবারক করলেন। সুবহানাল্লাহ! শত্রুদের সাথে কিরূপ আচরণ করা দরকার তা কায়িনাতবাসীর জন্য ইবরত ও নছীহত মুবারক রেখে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
জিহাদে নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ:
তিনি ছিলেন সম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম উনার সেই লক্বব মুবারক ‘আসাদুল্লাহিল গালিব’ রঙে রঙ্গীন। তিনি দুনিয়াবী অল্প বয়স মুবারক-এ অনেক জিহাদে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জিহাদের ক্ষেত্রে উনার সামনে কোনো শত্রু দাঁড়িয়ে স্থির থাকার কোনো সাহসই রাখতো না।
তিনি হিজরী ৩০ সনে হযরত সাঈদ ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে তাবারিস্তানে যে সেনাবাহিনী প্রেরিত হয়, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও তাতে অংশগ্রহণ করেন এবং নেতৃত্ব দেন।
তিনি জঙ্গে জামালে কূফা থেকে নয় হাজার ছয়শত পঞ্চাশ জন সৈন্য নিয়ে যীকার নামক স্থানে পৌঁছেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে যোগ দেন। ৩৭ হিজরীতে সংঘটিত ছিফ্ফিনের জিহাদেও তিনি অংশ গ্রহণ করেন।
খিলাফত মুবারক পরিচালনা:
যখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন, হিজরী ৪০ সনের পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খিলাফত মুবারক গ্রহণ করলেন। ৪০ হাজার লোক উনার পবিত্র হাত মুবারকে বাইয়াত হন। তিনি খিলাফত ৬ মাস পর্যন্ত পরিচালনা করেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার পরে খিলাফত মুবারক ৩০ বছর। তন্মধ্যে ২৯ বছর ৬ মাস পূর্ববর্তী খলীফাগণ উনাদের সময়ে অতিবাহিত হয়। বাকি ৬ মাস সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পূর্ণ করেন।
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ বা পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ:
বর্ণিত আছে, আহলে বাইত শরীফ উনাদের শত্রু তথা কাফিরেরা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার জন্য একে একে ৬বার মারাত্মক বিষ পান করায়। প্রতিবারই তিনি মারীদ্বী শান মুবারক অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম রওযা শরীফ গিয়ে দুয়া করেন এবং সাথে সাথেই ছিহহাতী শান মুবারক প্রকাশ পায়। কিন্তু শেষবার যে বিষ পান করানো হয় তা ছিল অত্যন্ত মারাত্মক বিষ তথা হিরকচূর্ণ। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদত মুবারক ছিল এই যে, তিনি প্রতিদিন তাহাজ্জুদ নামায আদায়ের সময় পানি মুবারক পান করতেন। তিনি যে কলসী মুবারক থেকে পানি মুবারক পান করতেন সে কলসী মুবারক উনার মুখ একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতেন যেন কেউ কিছু ফেলতে বা বিষ মিশ্রিত করতে না পারে। কিন্তু শত্রুরা হিরকচূর্ণ বিষ কলসীর মুখে বেঁধে রাখা কাপড়ে মিশিয়ে দিলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রতিদিনের ন্যায় পানি পান করার জন্য কলসী মুবারক থেকে পাত্রে পানি ঢাললেন- তখন হিরকচূর্ণ বিষসহ পানি পাত্রে পড়লো। তিনি তা পান করার সাথে সাথে মারাত্মক বিষক্রিয়া শুরু হলো এবং তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লেন। এবার আর উনার পক্ষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা শরীফ যাওয়া সম্ভব হলো না। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বুঝতে পারলেন যে, উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের সময় নিকটবর্তী। তাই তিনি ছোট ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সংবাদ দিলেন। তিনি আসলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে ভাই! আমাদের পিতাজান আলাইহিস সালাম তিনি শহীদ হয়েছেন। আমিও শহীদ হচ্ছি। কাজেই আপনি খিলাফত থেকে দূরে থাকবেন। খিলাফত ফিরিয়ে দেয়ার শর্ত বাতিল করে দেয়া হলো। এ কারণেই হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে তিনি খিলাফত ফিরিয়ে নেননি।
মূলকথা হলো- উক্ত মারাত্মক বিষক্রিয়ার কারণেই ৪৯ হিজরী সনের পবিত্র ২৮শে ছফর প্রায় ৪৬ বছর বয়স মুবারক-এ তিনি পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন তথা পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
বর্ণিত আছে- হযরত সাঈদ ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, যিনি মদীনা শরীফ উনার গভর্নর ছিলেন, তিনি উনার জানাযায় উপস্থিত হন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে নামায পড়ানোর জন্য সম্মুখে ঠেলে দিলেন এবং বললেন, যদি ইহা সুন্নত না হতো তবে আমি আপনাকে জানাযা পড়ানোর জন্য সম্মুখে ঠেলে দিতাম না। এতদ্ব্যতীত জানাযায় মদীনা শরীফবাসীর অসংখ্য লোক উপস্থিত ছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা শরীফ পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী শরীফ উনার মধ্যে অবস্থিত। (উসুদুল গাবা)
http://al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=1&textid=12285
http://al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=1&textid=12285

0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন