728x90 AdSpace

  • Latest News

    পিতার খেদমত করা প্রসঙ্গে সুন্দর একটি ঘটনা

    বনী ইস্রাইল আমলে এক লোক ছিল খুব ধার্মিক। খুব নেককার পরহেজগার। এক কথায় সে লোকটা ছিল মশহুর ধার্মিক আল্লাহ্ওয়ালা। কিন্তু সে ঋণগ্রস্থ হয়ে যায়, কোন কারণে। কিন্তু সে ঋণগ্রস্থ হওয়ার কথা ছিলনা। তার মাত্র একটা ছেলে ছিল। আর কোন আল আওলাদ বা ওয়ারিস তার কেউ ছিলনা। কোন কারণে হঠাৎ সে যখন ঋণগ্রস্থ হয়ে যায় তখন তার বয়সও অনেক হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ তার মৃত্যুর সময় প্রায় নিকটবর্তী। সে তখন তার সে সন্তানকে ডেকে বললো, ‘দেখ বাবা আমার তো অনেক সম্পদ রয়েছে সত্যিই, তবে ঋণও অনেক রয়েছে।’ ছেলেটাও ছিল আল্লাহ্ওয়ালা। পিতা বলল, ‘তুমি যেহেতু আমার ছেলে আমি তোমাকে কয়েকটা শপথ করিয়ে যাচ্ছি, তুমি এগুলো স্মরণ রাখবে। এক নাম্বার হচ্ছে তুমি কখনই ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, সত্য হোক, মিথ্যা হোক কসম কাটবেনা অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক উনার নামে কখনই কসম করবেনা ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক সত্য-মিথ্যা যেটাই হোকনা কেন কসম করবেনা।

    আর দুই নাম্বার হচ্ছে, যেহেতু তুমি ছাড়া আমার আর কোন আওলাদ নেই। আমার সম্পত্তি অনেক রয়েছে, যে সম্পদ রয়েছে তুমি বসে খেলেও খেতে পারবে কিন্তু আমার অনেক ঋণও রয়েছে। আমার ঋণ হয়তো পরিশোধ করতে গেলে সম্পদ নাও থাকতে পারে। তবে তুমি কমপক্ষে আমার পক্ষ হয়ে আমার সন্তান হিসেবে আমার ঋণগুলি পরিশোধ করে দিবে। হয়তো তোমার অসুবিধা হবে, আল্লাহ্ পাক তোমাকে হিফাযত করবেন ও সুখ-শান্তি দান করবেন।’ সেই ধার্মিক পিতা তার সন্তানকে বললো যে, ‘তুমি আমার ঋণগুলি পরিশোধ করে দিও। যদিও তোমার কষ্ট হবে তথাপিও আর আমি তোমার জন্য দোয়া করতেছি, আল্লাহ্ পাক তোমাকে হিফাযত করবেন এবং ইহকাল ও পরকালে সুখ-শান্তি দান করুন।’ তখন সে সন্তান রাজি হলো।
    এদিকে তার পিতা ইন্তেকাল করলো। সারা এলাকার লোক সেটা জেনে গেল যে, সে লোক ইন্তেকাল করেছে। তার ঋণের জিম্মাদার হয়েছে তার সন্তান। তখন পর্যায়ক্রমে লোক আসতে লাগলো। ঋণ সে দিতে লাগলো। তার যা সম্পত্তি ছিল ধন-দৌলত টাকা পয়সা সব দেয়া হয়ে গেল, জায়গা-জমীন বিক্রি করে শোধ করলো। শেষ পর্যন্ত সে, যে বাড়িতে ছিল সেটাও বিক্রী করে তার ঋণ পরিশোধ করতে হলো। তার সম্পদও শেষ হয়ে গেল, তার ঋণও পরিশোধ হয়ে গেল। এখন থাকার মত তার কোন জায়গা সেখানে ছিলনা এবং কাজ করার মত তার তেমন কোন যোগ্যতাও ছিলনা।
    সে এখন মনে মনে চিন্তা করলো তার স্ত্রী এবং তার দুই ছেলে রয়েছে। তাদের নিয়ে সে কি করবে এখন? কারণ কোন কাজ করবে সে? পরিশ্রম করেনি কোন সময়। কোন কাজ সে জানেনা, সে কি করে কাজ করবে! সে তখন তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করল যে আমরা এখান থেকে দূরে কোথাও চলে যাই, যেখানে আমাদেরকে কেউ চিনবেনা। সেখানে গিয়ে আমরা যেটা ইচ্ছা সেটা করতে পারবো। এখানে কোন কাজ করতে গেলে বা কিছু করতে গেলে মানুষ হয়তো অনেক কিছু মনে করবে, নানান কিছু বলবে। আর বিশেষ করে তার পিতার সম্মানের খাতিরে। আমার পিতাকে মানুষ খারাপ বলবে যে, সন্তানকে সে রাস্তায় বসিয়ে দিয়ে গেছে। আমার পিতাকে খারাপ গালি-গালাজ করবে। অশ্লীল, অশালীন কথা-বার্তা বলবে। কাজেই সেটা আমার পক্ষে বরদাশ্ত করা সম্ভব হবেনা। কাজেই আমি এখান থেকে চলে যাবো। স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে সে রওয়ানা হলো, অনেক দূর চলে যাওয়ার জন্য। কিছুদূর যাওয়ার পর একটা নদী পড়লো। বড় এক নদী। তারা নৌকায় চড়লো। নৌকায় চড়ে কিছুদূর যাওয়ার পর মধ্য নদীতে যাওয়ার পর হঠাৎ তুফান উঠলো। ছিল রাত্রিবেলা, তুফানে সমস্ত নৌকা ছিন্নভিন্ন করে দিল, তছনছ করে দিল। তারা কোথায় কে চলে গেল কোন চিহ্ন রইলোনা। প্রত্যেকেই জুদা হয়ে গেল। কারো খবর কারো কাছে পৌঁছলোনা, কোথায় কে অবস্থান করতেছে।
    সেই যে লোকটা বা ছেলেটা যে নেক সন্তান, সে নিরিবিলি এক জঙ্গলের কিনারে গিয়ে উঠলো। অর্থাৎ যখন তার হুঁশ ফিরে আসলো, সে দেখলো যে, সে জঙ্গলের পাশে পড়ে রয়েছে। সে উঠলো, উঠে চিন্তা করলো এখন কি করা যেতে পারে? নির্জন, লোকজন নেই, ভয়ও করছে। স্মরণ হলো তার স্ত্রীর কথা, তার ছেলেদের কথা। কিন্তু স্মরণ হলেও তো করার কিছু নেই। কেউই নেই সেখানে, একলা সে নদীর পাড়ে, জঙ্গলের পার্শ্বে। সে রওয়ানা হয়েছে যাওয়ার জন্য। কিন্তু কোথায় যাবে? রাস্তা নেই, ঘাট নেই, ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল। হঠাৎ একটা নেদা হলো, হে নেক সন্তান! পিতা-মাতার অনুগত সন্তান, তুমি সামনে অগ্রসর হও। তোমার জন্য আল্লাহ্ পাক এখানে কিছু ধন ভান্ডার রেখেছেন। তুমি সেটা গ্রহণ কর এবং ব্যবহার কর। আল্লাহ্ পাক উনার নির্দেশে সে সামনে অগ্রসর হলো। হওয়ার পর সত্যিই একটা ধন ভান্ডার সে পেল। এখন সে এটা কি করবে? আল্লাহ্ পাক উনার ইচ্ছা, কিছু লোক কোথা থেকে সেখানে এসে পৌঁছল। পৌঁছার পর সে তাদের সহিত ভাল ব্যবহার করলো এবং সে উক্ত লোকদের মাধ্যমে আর কিছু লোক আনালো। যেহেতু তার টাকা-পয়সা ছিল, তাই সে কিছু কাজ-কাম করালো, ঘর-বাড়ী তৈরী করলো এবং অনেক দান-খয়রাতও সে করলো। আস্তে আস্তে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়লো সারা এলাকাতে। নদীর এপাশ-ওপাশ সব পাশেই গিয়ে সে সংবাদ পৌঁছলো। লোকজন আসতে থাকলো তার সাথে সাক্ষাতের জন্য, দানশীলতার জন্য। কাউকে সে ফিরিয়ে দেয় না। কম বেশী দান করে, মেহমানদারী করে, জায়গা বিশেষ লোকদেরকে থাকারও ব্যবস্থা সে করে দেয়। এভাবে তারা চলতে লাগলো। কয়েক বছর অতিবাহিত হয়ে গেল।
    হঠাৎ একটা ছেলে আসলো তার এখানে থাকার জন্য। সে তাকে কাজ দিলো। মূলতঃ সেটা ছিল তারই বড় ছেলে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানের কারণে সন্তান পিতাকে চিনতে পারেনি, পিতাও সন্তানকে চিনতে পারেনি। তাকে কাজ দিয়ে রেখে দিলো। যেহেতু তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল সারা এলাকায়। তার দ্বিতীয় ছেলে যেখানে ছিল, সে জায়গায় এক লোকের অধীনে থাকা অবস্থায়ই সে এই লোকের সংবাদ শুনে যে, সে খুব দানশীল এবং সে মানুষের সঙ্গে সৎ ব্যবহার করে। তা শুনে সেও পর্যায়ক্রমে সেখানে আসলো এবং চাকরি নিল এখানে এসে। বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হলো।
    সেই লোকের যে স্ত্রী ছিল সেও ভাসতে ভাসতে এক এলাকায় গিয়ে পৌঁছেছিল। সে এমন এক লোকের বাড়ীর পাশে গিয়ে পৌঁছল, যে লোকটা ছিল নেককার, দ্বীনদার, পরহেজগার, আল্লাহ্ওয়ালা। সে সকালে যখন সেই মহিলাকে দেখলো তখন চিন্তা করলো, কোথা থেকে এই বেগানা মহিলা এখানে আসলো? পরে তারা বুঝতে পারলো, নৌকা ভেঙ্গে এখানে এসেছে। তাই সেই লোকটা মহিলাকে আশ্রয় দিল এবং কয়েক বছর ওখানে রাখলো। যখন নেককার লোকটি সংবাদ পেলো, একজন লোক, সে খুব দানশীল, গরীবকে সাহায্য করে থাকে। তখন সেই নেককার লোকটা যার অবস্থা মোটামুটি ছিল সে বললো, “আমি আর কতদিন তোমাকে লালন-পালন করবো? তুমি এক কাজ করো, আমার সাথে চল, সেই নেককার লোকের কাছে তোমাকে পৌঁছে দেই, সে তোমার একটা ব্যবস্থা করে দিবে। অথবা তার কাছে সাহায্য নিয়ে আসি, তোমার চলাচলের জন্য যেন সুবিধা হয়।” এই বলে সেই মহিলাকে সে নিয়ে আসলো এক নৌকা দিয়ে। এনে তার ঘাটে বেঁধে সেই দানশীল লোকের কাছে সে পরামর্শ করলো কি করা যেতে পারে? সে কিছু দান-খয়রাত করলো। রাত্র অনেক হয়ে গেল। সে দানশীল ব্যক্তি বললো, তুমি এত রাত্রে যাবে কোথায়? তুমি থাক, তোমার থাকার এবং খাওয়ার ব্যবস্থা আমি করবো। তখন সে বললো যে, ‘আমি তো একা নই, আমার সাথে আমার নৌকাতে একজন মহিলা রয়েছেন। যার জন্য আমি তোমার এই দান খয়রাত গুলো গ্রহণ করেছি। সে অভাবগ্রস্থা। ‘তখন সেই পুরুষ বললো’ তাহলে এক কাজ করো। তাকে পাহারা দেয়ার জন্য আমি লোক দিচ্ছি। তুমি চিন্তা কর না। পাহারা দেয়ার জন্য লোক দিলো, সেই ছেলে দু’টাকে দিল পাহারা দেয়ার জন্য।
    সেই ছেলে দু’টা এখানে এসে সৎচরিত্র বান, নেককার, পরহেজগার, দ্বীনদার এবং তাদের সততায় তারা এখানে মোটামুটি পরিচিতি লাভ করে নেককার হিসেবে। যেহেতু তারা সৎচরিত্রবান ছিল সে জন্য সেই ছেলে দু’টাকে পাহারা দেয়ার জন্য দেয়া হলো, সেই নৌকার পাশে যখন তারা গিয়ে পৌঁছল, তখন তারা পরস্পর বললো যে, “আজকে রাত্রে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কি করবো সারা রাত্রে? করার তো কিছু নেই। এক কাজ কর তুমি কোথা থেকে এখানে আসলে? আর আমি বা কোথা থেকে আসলাম? আমরা পরস্পর আমাদের পিছনের জীবনের কথা আলোচনা করি, তাতে রাত্র শেষ হয়ে যাবে।” তখন প্রথম যে ছেলেটা সেখানে এসেছে, সে তার ইতিহাস বর্ণনা করলো যে, “আমরা এরকম ছিলাম, খুব সুখে ছিলাম, শান্তিতে ছিলাম। আমার পিতা, আমার এক ভাই, আমার মা ছিলেন কিন্তু হঠাৎ আমরা, আমার দাদার ঋণ পরিশোধ করে শেষ পর্যন্ত নিঃস্ব হয়ে যাই, সম্বলহীন হয়ে যাই। তখন আমরা অন্য কোথাও চলে যাওয়ার জন্য নৌকায় চড়েছিলাম, নৌকা ভেঙ্গে আমরা ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাই। কে কোথায় গিয়েছি? তার সংবাদ আমাদের জানা নেই, আমারটা আমিই জানি।
    যখন প্রথম ছেলে একথা বললো, তখন দ্বিতীয় ছেলেটা বললো, তোমার পিতার নাম কি? সে জবাব দিল। তখন সেই ছেলেটা বললো যে, দেখ তুমি তোমার যে ভাইকে তালাশ করতেছিলে আমি মনে হয় তোমার সেই ভাই। আমার জীবনের ঠিক একই ঘটনা। আমরা দুই ভাই ছিলাম এবং হারিয়ে গিয়েছিলাম। তখন তাদের পরিচয় হয়ে গেল। সেই মহিলা নৌকায় বসে বসে সেই ঘটনা শুনলো, শুনে সে চুপ করে রইলো, কথা সে বললো না। সকালে যখন সে পুরুষ আসলো, সে তাকে দেখলো বিমর্ষ, চিন্তিত। কি ব্যাপার? সে বললো, এখানে কথা বলা যাবে না, এখানকার এলাকার যিনি মালিক, ওনার কাছে যেতে হবে। ওনার কাছে আমার কিছু কথা রয়েছে, আমি বললে হয়তো তারা (ছেলেরা) শুনবে না। ঠিক আছে সেই লোক অপারগ হয়ে সেই মহিলাকে নিয়ে গেল সেই লোকের কাছে। সে বলল কি? কেন নিয়ে এসেছ? জবাব দিল, সে মহিলার কিছু কথা রয়েছে। লোকটা প্রথমে একটু উত্তেজিত হয়ে গেল। কি ব্যাপার? কোন অঘটন কি ঘটিয়েছে তারা? সে মহিলা বললো যে, না ‘তেমন কিছু ঘটেনি।’ যেহেতু তার চেহারা আবৃত করা ছিল। তার চেহারা দেখা যাচ্ছিলনা। “তবে গত রাত্রে তারা একটা গল্প বলেছিল, সে গল্পটা আমি আবার শুনতে চাই। তারা যেন আবার বলে। ছেলে দু’টোকে ডাকানো হলো। ডেকে বলা হলো যে, তারা যে গত রাত্রে কাহিনী বলেছে, সেটা আবার বলতো। পুনরায় সেই কাহিনী যখন সেই ছেলে দু’টা বলল, তখন সেই লোকটা তার আসন থেকে লাফ দিয়ে উঠে বললো যে, সত্যিই যদি এই ঘটনা সত্যই হয়ে থাকে তাহলে তো তোমরাই আমার সন্তান। আমি তোমাদের পিতা। যখন সে পরিচয় দিল, তখন সেই মহিলা বললো যে, ‘আল্লাহ্ পাক উনার কসম আমি-ই তাদের মাতা।’ যেই ঘটনা বাস্তব সত্য, সেটা তাদের মুখ দিয়ে আবার শুনার জন্য আমি বলেছি তাদের বলার জন্য। অন্য কোন কারণে নয়। তখন পরিচয় হয়ে গেল। তারা আবার পরস্পর সেখানে সুখে শান্তিতে থাকতে লাগলো। তাদের প্রতি গায়েবী নেদা হলো ঐ ছেলের প্রতি, যে ছেলে তার পিতার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল যে, “তুমি তোমার পিতার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলে, কষ্ট করেছ। আল্লাহ্ পাক তোমাকে তার বদলা, জাযা-খায়ের দিয়েছেন। তোমাকে ইহকালে সুখ দেয়া হলো এবং পরকালে তোমার জন্য সুখ অপেক্ষা করতে থাকলো।”
    • Blogger Comments
    • Facebook Comments

    0 মন্তব্য(গুলি):

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Item Reviewed: পিতার খেদমত করা প্রসঙ্গে সুন্দর একটি ঘটনা Rating: 5 Reviewed By: Unknown
    Scroll to Top