ক্বিবলা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিশেষ করে মসজিদ ওরিয়েন্টেশন (ঙৎরবহঃধঃরড়হ)-এর ক্ষেত্রে কম্পাস ব্যবহার করা সমীচীন নয়। সূর্যের গতিবিধি ও অবস্থান ভিত্তিক নিম্নের পদ্ধতি অনুসরণ অধিক নির্ভরশীল। শত শত বছর পর্যবেক্ষণ করে মুসলমানগণ কর্তৃক অনেক কিতাবাদিতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে, বছরে দু’বার সূর্য পবিত্র কা’বা শরীফ উনার উপরে অবস্থান করে। এটি শত শত বছরব্যাপী মুসলমানগণ কর্তৃক পর্যবেক্ষণমূলক বাস্তবতা এবং পবিত্র মক্কা শরীফ উনার দূরবর্তী স্থান থেকে সঠিক ক্বিবলা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিগত কয়েক শতাব্দীব্যাপী মুসলমানগণ উনাদের পর্যবেক্ষণীয় প্রয়াস। এর দুটি তারিখ ও সময় হলো :
২৮ মে : ৯:০১ মি: ইউটি।
১৬ জুলাই : ৯:২৭ মি: ইউটি।
এলাকাভিত্তিক স্থানীয় সময়ে পরিবর্তন করে উপরোক্ত সময়ে সূর্যের গতিবিধি ও অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হলে পবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে নির্দেশক হিসেবে দেখা যাবে। কারণ পবিত্র কা’বা শরীফ উনার উপর গগনচুম্বী মিনার থাকলে তা’ ঐরূপই দেখা যাবে, যেমনটি সূর্যকে দেখা যায়। উল্লিখিত সময়ে আপনি যদি একঠি লাঠি লম্বভাবে মেঝেতে দাঁড় করিয়ে লাঠির ছায়া বরাবর একটি রেখা টেনে সূর্যের দিকে দিক নির্দেশক চিহ্ন দেন, তাহলে উক্ত রেখা পবিত্র ক্বিবলা উনার দিক নির্দেশক রেখা হবে। কতিপয় উদাহরণ সহযোগে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
আপনি যদি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় থাকেন, তবে আপনি গ্রীনিচ মান সময়-এর সাথে+৬ ঘণ্টা ব্যাবধানে থাকার কারণে সূর্য পর্যবেক্ষণের স্থানীয় সময় হবে:
৩: ১৮ মি: অপরাহ্ন ২৮ মে
৩:২৭ মি: অপরাহ্ন ১৬ জুলাই
অনুরূপ আপনি যদি কানাডার নোভা স্কটিয়ায় থাকেন, তবে আপনি গ্রীনিচ মান সময়- এর সাথে -৩ ঘণ্টা ব্যাবধানে থাকবেন। তখন স্থানীয় সময় হবে:
২৮ মে ৬:১৮ মি: এবং
১৬ জুলাই ৬:২৭ মি:।
যদি আপনি এমন অবস্থনে থাকেন, যেখান থেকে উল্লিখিত তারিখ ও সময়ে সূর্য দেখা যায় না, তখন সূর্যের অবস্থান থেকে পবিত্র ক্বিবলা উনার দিক নির্ধারণ করতে হবে। তখন গোলকে সূর্যের অবস্থান থাকবে উপরে সোজাসুজি অর্থাৎ বরাবর পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বিপরীত অবস্থানে। সেই তারিখ ও সময় হবে :
২৮ নভেম্বর ২১:০৯ ইউটি।
১৬ জানুওয়রী ২১:২৯ ইউটি ।
স্থানীয় সময অনুযায়ী এই সময়ে সূর্যের ছায়া অভিমুখে আপনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার দিকে মুখ করে দাঁড়ালে যদি আপনি সূর্য দেখতে পান, তবে তখন সূর্যের দিকে পিঠ করে দাঁড়ালে আপনার মুখ ক্বিবলার দিকে থাকবে।
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের অবস্থান প্রত্যক্ষ করে, অথবা সূর্যের ছায়া প্রত্যক্ষ করে, অথবা ক্বিবলা যখন সূর্যের ৯০ ডিগ্রি বামে অথবা ডানের অবস্থানে থাকে, তখন ক্বিবলার দিক সঠিক ভাবে গণনা করা যায়। এই পদ্ধতি অধিকতর নির্ভুল।
মনে রাখা দরকার যে, কম্পাস কখনো প্রকৃতভাবে উত্তর দিকের নির্দেশনা দেয় না। কারণ কম্পাসের কাঁটার চুম্বকীয় আকর্ষণ সাধারণভাবে উত্তরমুখী থাকে। কাজেই এটা নিরূপণ করা কঠিন যে, এটি সঠিক উত্তর দিক হতে কতো ডিগ্রি দূরে অবস্থান করছে। সঠিক উত্তর দিক এবং চুম্বকীয় আকর্ষণ, উত্তর দিকের ব্যাবধান নিরূপণে গণনায় আনা যায়। তবে এ দুটির ধার্যকৃত মান ব্যবহার করা গেলেও এর মধ্যে ভুল থেকে যায়। কারণ চুম্বকীয় আকর্ষণের ক্ষেত্র শুধু ক্রমাগতভাবে পরিবর্তনশীলই নয়, বরং নানাবিধ কারণে পৃথিবী অভ্যন্তরে পরিবর্তনের জন্য এর পরিবর্তনশীলতাও কার্যকর থেকে যায়। এছাড়াও চুম্বকীয় আকর্ষণের ক্ষেত্র অথবা ধাতু ঘটিত বস্তুসমূহ কম্পাসের কাঁটাকে ভ্রান্ত দিক নির্দেশিত করতে পারে।
http://al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=2&textid=14652

0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন