মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি ৮ম হিজরী সনে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করে সমস্ত জিন-ইনসান ও তামাম কায়িনাতবাসীকে অফুরন্ত রহমত-বরকত, ছাকীনাহ ও নিয়ামত মুবারক দানে ধন্য করেন। সুবহানাল্লাহ! এই বিষয়ে কারো কোন ইখতিলাফ নেই। কিন্তু তিনি কোন মাসে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, এই বিষয়ে অনেকর অনেক ইখতিলাফ রয়েছে। আর তারিখ ও বারের বিষয়ে তো কিতাবে কোনো আলোচনাই নেই।
সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ছাহিবুল ইলমিল আউওয়াল ওয়াল আখিরি, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বওইউল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি সকলের সমস্ত ইখতিলাফকে মিটিয়ে দিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন, “ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আশবাহুল খলক্বি বিরসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল মুবাশ্শির সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি ৮ম হিজরী সনের যিলহজ্জ শরীফ মাসে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! শুধু তাই নয়, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দায়িমী আখাচ্ছুল খাছ তাওয়াল্লুক-নিসবত মুবারক উনার মাধ্যমে এই বিষয়টিও সমস্ত জিন-ইনসান ও তামাম কায়িনাতবাসীর মাঝে প্রকাশ করে দিয়েছেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি ৮ম হিজরী সনের ২রা যিলহজ্জ শরীফ লাইলাতুল জুমুয়াতি তথা জুমুয়াবার রাতে দুনিয়ার যমীনে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! দুনিয়াবী জিন্দেগী মুবারক অনুযায়ী তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলো ৬১ বছর।” সুবহানাল্লাহ!
এটা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার একখানা অভূতপূর্ব বেমেছাল সম্মানিত তাজদীদ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত আক্বীক্বাহ মুবারক দেয়া এবং অনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নাম মুবারক রাখা:
এই সম্পর্কে কিতাব মুবারক উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
وَعَقَّ عَنْهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ سَابِعِهٖ بِكَبْشَيْنِ وَحَلَقَ رَأْسَهٗ حَضْرَتْ اَبُوْ هِنْدَ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ وَسَـمَّاهُ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَئِذٍ وَّتَصَدَّقَ بِزِنَةِ شَعْرِهٖ وَرَقًا عَلَى الْـمَسَاكِيْنِ وَدُفِنُوْا شَعْرُهٗ فِى الْاَرْضِ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সপ্তম দিনে উনার পক্ষ থেকে দুইটি দুম্বা মুবারক সম্মানিত আক্বীক্বাহ মুবারক দেন। হযরত আবূ হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উনার সম্মানিত মাথা মুবারক মু-ন মুবারক করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই দিন উনার সম্মানিত নাম মুবারক রাখেন। আর উনার সম্মানিত চুল মুবারক পরিমাপ করে সেই ওজন অনুযায়ী রূপা মিসকীনদেরকে দান করে দেন এবং উনার সম্মানিত চুল মুবারক উনাদেরকে যমীনে দাফন মুবারক করা হয়।” সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ ১/৪৮৫, শারহুয যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব ৪/৩৪৫, মুন্তাখাব, শরহু মুসনাদে আবী হানীফা ইত্যাদি )
ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি যখন উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত রেহেম শরীফ-এ অবস্থান মুবারক করছিলেন, তখনই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময়ম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কে সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া করেছেন, উনার সম্মানিত নাম মুবারক ‘ইবরাহীম’ আলাইহিস সালাম রাখার জন্য নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন এবং উনাকে ‘আবূ ইবরাহীম’ কুনিয়াত মুবারক হাদিয়া করেছেন।
তারপর উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সাথে সাথে মহান আল্লাহ উনার নির্দেশে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ এসে ইরশাদ মুবারক করেছেন ‘হে সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত আব্বাজান।’ সুবহানাল্লাহ!
আর স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেছেন, নিশ্চয়ই আজ এই মহাসম্মানিত রাতে আমার একজন মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম তিনি বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন এবং আমি উনার নাম মুবারক রেখেছি আমার সম্মানিত পিতা তথা পূর্বপুরুষ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক-এ। অর্থাৎ আমি আমার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক রেখেছি ‘হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম’। সুবহানাল্লাহ!
তারপরেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার লখতে জিগার, মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সপ্তম দিনে উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত আক্বীক্বাহ মুবারক দেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় উনার সম্মানিত নাম মুবারক রাখেন ‘সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম’। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং এই সকল বর্ণনা মুবারক উনাদের মাধ্যমে দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল, যেটা সমস্ত কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার বাইরে। সুবাহানাল্লাহ!
সেটাই মুজাদ্দিদে আ’যম সম্মানিত রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়া সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন যে, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আশবাহুল খলক্বি বি-রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল মুবাশ্শির সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত লক্বব মুবারক:
ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া যত সম্মানিত লক্বব মুবারক রয়েছেন সমস্ত সম্মানিত লক্বব মুবারক উনার অধিকারী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! এখানে উনার কতিপয় সম্মানিত বরকতময় লক্বব মুবারক উল্লেখ করা হলো-
اِبْنُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، اَشْبَهُ الْـخَلْقِ بِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، سَيِّدُ الْبَشَرِ، سَيّـِدُ الْاَسْيَادِ، اَلْـمُـبَشِّـرُ، حَضْرَتْ رَابِعٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ، اَلْاَبَرُّ، اَلْاَجْوَدُ، اَجْوَدُ النَّاسِ، اَلْاَجَلُّ، اَلْاَخْشٰى لِلّٰهِ، اَلْاَزْكٰـى، اَلْاَعْظَمُ، اَلْاَعْلـٰى، اَكْرَمُ النَّاسِ، اَلْاَمْـجَدُ، اَلْاِمَامُ، اِمَامُ الْـخَيْرِ، اِمَامُ الْمُتَّقِيْنَ، اِمَامُ النَّاسِ، اَلْاَمَانُ، اَلْبَهَاءُ، اَلْـجَلِيْلُ، اَلْـجَوَّادُ، اَلْـحَافِظُ، اَلْـحَامِدُ، حَبِيْبُ اللهِ، اَلْـحَقُّ، اَلْـحَلِيْمُ، اَلْـحَىُّ، اَلْـخَالِصُ، اَلْـخَبِيْرُ، اَلْـخَلِيْلُ، خَلِيْلُ الرَّحْـمٰنِ، خَلِيْلُ اللهِ، اَلْـخَيْرُ، خَيْرُ الْبَرِيَّةِ، خَيْرُ النَّاسِ، خَيْرُ خَلْقِ اللهِ، اَلذَّاكِرُ، ذُو الْـخُلُقِ الْعَظِيْمِ، ذُو السَّكِيْنَةِ، ذُو الـصِّـرَاطِ الْمُسْتَقِيْمِ، ذُو الْعِزَّةِ، ذُو الْفَضْلِ، ذُو الْكَرَامَةِ، ذُو الْوَسِيْلَةِ، اَلرَّاضِىُ، اَلرَّافِعُ، رَحْـمَةُ الْاُمَّةِ، رَحْـمَةٌ لِّـلْـعَـالَـمِيْنَ، اَلرَّشِيْدُ، اَلـرِّضَا، اَلـرِّضْوَانُ، رِضْوَانُ اللهِ، اَلـزَّكِـىُّ، اَلسَّابِقُ بِالْـخَيْرَاتِ، اَلسَّخِىُّ، سَعْدُ اللهِ، سَعْدُ الْـخَلَائِقِ، اَلسَّلَامُ، سَـيِّـدُ الْكَوْنَيْنِ، اَلشَّافِعُ، اَلشَّاكِرُ، اَلـشِّـفَـاءُ، اَلطَّاهِرُ، اَلطَّبِيْبُ، اَلـطَّـيِّـبُ، اَلْعَبْدُ، اَلْعَابِدُ، اَلْعَادِلُ، اَلْعِصْمَةُ، عِصْمَةُ اللهِ تَعَالـٰى، اَلْعَظِيْمُ، اَلْعَزِيْزُ، اَلْغَالِبُ، اَلْغَفُوْرُ، اَلْغَنِىُّ، اَلرَّافِعُ، اَلْفَاضِلُ، اَلْفَائِقُ، اَلفَتَّاحُ، اَلْفَخْرُ، اَلْفَرْدُ، اَلْفَضْلُ، فَضْلُ اللهِ، اَلْفَصِيْحُ، اَلْقَاسِمُ، اَلْقَائِدُ، قَائِدُ الْـخَيْرِ، اَلْقَرِيْبُ، اَلْكَرِيْـمُ، اَلْمُؤْتَـمَنُ، اَلْمَأْمُوْنُ، اَلْمَاجِدُ، اَلْمُعَظَّمُ، اَلْمَبْعُوْثُ بِالْـحَـقِّ، اَلْمُعِيْنُ، اَلْمُكَرَّمُ، اَلْمَوْعِظَةُ، اَلْمَوْلـٰى، اَلْمُهَذَّبُ، اَلنَّاصِحُ، اَلنُّوْرُ، نُوْرُ الْاُمَمِ، اَلنِّعْمَةُ، نِعْمَةُ اللهِ، اَلْـهَادِىُ، اَلْـهُدٰى، هَدِيَّةُ اللهِ، اَلْوَاسِعُ، اَلْوَالِـىُ.
সম্মানিতা দুধমাতা আলাইহাস সালাম:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
فَتَنَافَسَتْ فِيْهِ نِسَاءُ الْاَنْصَارِ مَنْ يُّرْضِعُهٗ
অর্থ: “হযরত আনছার মহিলা ছাহাবীয়াহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুন্নাগণ উনারা পরস্পর প্রতিযোগিতায় লেগে গেলেন, কে সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানতি দুধ মুবারক পান করানোর ব্যাপারে সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুন্তাখাব)
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মে সাইফ আলাইহাস সালাম উনাকে কবূল করলেন। সুবহানাল্লাহ! এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وُلِدَ لِىَ اللَّيْلَةَ غُلَامٌ فَسَمَّيْتُهٗ بِاسْمِ اَبِـىْ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ ثُـمَّ دَفَعَهٗ اِلـٰى حَضْرَتْ اُمِّ سَيْفٍ عَلَيْهَا السَّلَامُ اِمْرَاَةِ قَيْنٍ يُّقَالُ لَهٗ حَضْرَتْ اَبُوْ سَيْفٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَانْطَلَقَ يَأْتِيْهِ وَاتَّبَعْتُهٗ فَانْتَهَيْنَا اِلـٰى حَضْرَتْ اَبِـىْ سَيْفٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَهُوَ يَنْفُخُ بِكِيْرِهٖ قَدِ امْتَلَاَ الْبَيْتُ دُخَانًا فَاَسْرَعْتُ الْمَشْىَ بَيْنَ يَدَىْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ يَا حَضْرَتْ اَبَا سَيْفٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَمْسِكْ جَاءَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَمْسَكَ فَدَعَا النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالصَّبِىِّ فَضَمَّهٗ اِلَيْهِ وَقَالَ مَا شَاءَ اللهُ اَنْ يَّقُوْلَ.
অর্থ: “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- আমার একজন মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম তিনি আজ রাতে বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন এবং আমি উনার নাম মুবারক রেখেছি আমার সম্মানিত পিতা তথা পূর্বপুরুষ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক-এ।
অর্থাৎ আমি আমার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক রেখেছি ‘সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম’। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে (সম্মানিত দুধ মুবারক পান করানোর জন্য) সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সাইফ আলাইহাস সালাম উনার নিকট হস্তান্তর মুবারক করেন। আর সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সাইফ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আহাল তথা স্বামী ছিলেন কর্মকার। উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সাইফ আলাইহিস সালাম বলা হতো। নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ উনাকে দেখার জন্য হযরত আবূ সাঈফ আলাইহিস সালাম উনার নিকট তথা উনার বাড়িতে আসতেন এবং আমি উনাকে অনুসরণ করতাম (উনার সাথে যেতাম)। আমরা দেখতাম সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সাইফ আলাইহিস সালাম তিনি উনার হাঁপরে ফুঁক দিচ্ছেন। আর উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। অতঃপর আমি খুব দ্রুত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পৌঁছার আগেই এগিয়ে যেতাম এবং বলতাম, হে হযরত আবূ সাইফ আলাইহিস সালাম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন, আপনি বিরত থাকুন। অতঃপর তিনি বিরত থাকতেন। তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনাকে ডাকতেন এবং উনাকে (সম্মানিত বুক মুবারক) উনার সাথে জড়িয়ে নিতেন। অতঃপর তিনি যা ইচ্ছা পোষণ করতেন, তা ইরশাদ মুবারক করতেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে সা’দ ইত্যাদি)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ مَا رَاَيْتُ اَحَدًا كَانَ اَرْحَمَ بِالْعِيَالِ مِنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مُسْتَرْضَعًا لَّهٗ فِىْ عَوَالِى الْمَدِيْنَةِ. فَكَانَ يَنْطَلِقُ وَنَـحْنُ مَعَهٗ. فَيَدْخُلُ الْبَيْتَ وَاِنَّهٗ لَيُدَّخَنُ وَكَانَ ظِئْرُهٗ قَيْنًا فَيَأْخُذُهٗ فَيُقَبّـِلُهٗ ثُـمَّ يَرْجِعُ.
অর্থ: “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পরিবার-পরিজনের প্রতি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে অধিক স্নেহ-মমতাবান আর কাউকে আমি দেখিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার আওয়ালী (উঁচু) মহল্লায় সম্মানিত দুধ মুবারক পানরত ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম উনার মুহব্বত মুবারক-এ) সেখানে চলে যেতেন। আমরা উনার সাথে সেখানে যেতাম। তারপর তিনি সম্মানিত হুজরা শরীফ-এ প্রবেশ করতেন; সম্মানিত হুজরা শরীফখানা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকতো। (কারণ) ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত দুধপিতা আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন একজন কর্মকার। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ, লখতে জিগার সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনাকে (বেমেছাল মুহব্বত মুবারক-এ কোল মুবারক-এ) তুলে নিতেন এবং উনাকে চুমু মুবারক দিতেন। অতঃপর তিনি ফিরে আসতেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ ১/১০৯, আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৩/৩৩১, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি)
এখান থেকে দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ, আল মুবাশ্শির সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনাকে কত বেমেছাল মুহব্বত মুবারক করতেন। সুবহানাল্লাহ! তাই বান্দা-বান্দী, উম্মত যদি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক পেতে চায়, তাহলে তাদের জন্য ফরযের উপর ফরয হচ্ছে ইবনু রসূলিল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত মুহব্বত মুবারক করা, সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া, উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করা। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
ইবনু রসূলিল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি ১০ম হিজরী শরীফ উনার সাইয়্যিদুশ শুহূর মহাসম্মানিত রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার ১০ তারিখ ইয়াওমুছ ছুলাছা শরীফ (মঙ্গলবার) মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
তিনি দুনিয়ার যমীনে কতদিন অবস্থান মুবারক করেছিলেন, এই নিয়ে অনেক ইখতিলাফ রয়েছে। তবে মুজাদ্দিদে আ’যম, ছাহিবুল ইলমিল আউওয়ালি ওয়াল আখিরি, বাহরুল উলূম, ইমামুল আইম্মাহ মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি এই বিষয়ে সর্বোত্তম ফায়ছালা মুবারক দিয়েছেন যে, মশহূর ও বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি ১৬ মাস দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ তিনি ১৬ মাস বয়স মুবারক-এ মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর তিনি সম্মানিত দলীল মুবারক পেশ করেন,
عَنْ حَضْرَتْ اَلْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ مَاتَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ ابْنُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ ابْنُ سِتَّةَ عَشَرَ شَهْرًا فَاَمَرَ بِهٖ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ يُّدْفَنَ فِى الْبَقِيْعِ وَقَالَ اِنَّ لَهٗ مُرْضِعًا يُّرْضِعُهٗ فِى الْـجَنَّةِ
অর্থ: “হযরত বারা ইবনে আযিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার দুনিয়াবী জিন্দেগী মুবারক অনুযায়ী বয়স মুবারক যখন ১৬ মাস, তখন তিনি সম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’আলইহিস সালাম উনার রওযা শরীফ জান্নাতুল বাক্বী’ শরীফ উনার মধ্যে স্থাপন করার জন্য নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন এবং তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই উনার জন্য সম্মানিত জান্নাত মুবারক-এ একজন সম্মানিতা দুধপানকারিনী রয়েছেন, যিনি উনাকে দুধ মুবারক পান করাবেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ ৩০/৫২০, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ৩/২৫১, আল আহাদ ওয়াল মাছানী ৫/৫৬৪, তারীখুল মদীনা ১/৯৭)
অনুরূপ বর্ণনা আস সুনানুল কুবরা লিলবাইহাক্বী, শরহু মা‘আনিল আছার, মুছান্নাফে আবী শায়বাহ, মা’রিফাতুছ ছাহাবাহ লিআবী নাঈম, মুছান্নাফে আব্দির রাজ্জাক্ব ইত্যাদি কিতাবসমূহেও রয়েছে।
স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি মাস হিসেবে দুনিয়ার যমীনে ১৬ মাস সম্মানিত অবস্থান মুবারক করেছিলেন। আর দিন হিসেবে ১৫ মাস ৮ দিন অবস্থান মুবারক করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَـمُوْتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا
অর্থ: “(হযরত ইহইয়াহ আলাইহিস সালাম) উনার উপর সালাম তথা রহমত, বরকত, ছাকীনাহ যেদিন তিনি সম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, যেদিন তিনি সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন এবং যেদিন তিনি পুনরুত্থিত হবেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা মারইয়াম শরীফ, সম্মানতি আয়াত শরীফ: ১৫)
সুতরাং সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই রয়েছে যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন, সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন এবং পুনরুত্থানের দিন সালাম তথা রহমত, বরকত, ছাকীনাহ, দয়া, দান, ইহসান মুবারক বর্ষিত হয়। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার, সরাসরি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন এবং মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন কত বেশি সম্মানিত রহমত, বরকত, ছাকীনাহ, দয়া, দান, ইহসান মুবারক বর্ষিত হয়, তা সমস্ত কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার বাইরে। সুবহানাল্লাহ!
অতএব সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী যদি আখাচ্ছুল খাছ রহমত, বরকত, ছাকীনাহ, দয়া, দান, ইহসান মুবারক, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে চায়, ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চায়, আল্লাহ ওয়ালা, আল্লাহ ওয়ালী হতে চায়, তাহলে তাদের জন্য ফরযের উপরেও ফরয হচ্ছে ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিন এবং মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন উপলক্ষে সম্মানিত ফালইয়াফরহূ তথা মহাসম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা, উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করা, সম্মানিত তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া এবং উনার সম্মানতি জীবনী মুবারক আলোচনা করা এবং সেখান শিক্ষা গ্রহণ করা। সুবহানাল্লাহ!
ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অজস্র ধারায় সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করা:
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ لَمَّا قُبِضَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ ابْنُ النَّبِـىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَـهُمُ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تُدْرِجُوْهُ فِىْ اَكْفَانِهٖ حَتّٰى اَنْظُرَ اِلَيْهِ فَاَتَاهُ فَانْكَبَّ عَلَيْهِ وَبَكٰى حتَّى اضْطَرَبَ لِـحْيَاهُ وَجَنْبَاهُ صلَّى الله عَلَيْهِ وسلَّم.
অর্থ: “হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি উনাকে না দেখা পর্যন্ত আপনারা উনাকে সম্মানিত কাফন মুবারক-এ জড়িয়ে দিবেন না। পরে তিনি এসে উনার উপর ঝুঁকে পড়লেন এবং উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে সম্মানিত চক্ষু মুবারক দিয়ে অজস্র ধারায় সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করতে লাগলেন। ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূরুন নি‘য়ামত মুবারক (দাড়ি মুবারক) এবং সম্মানিত গ-দ্বয় মুবারক কেঁপে উঠতে লাগলো।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, বিদায়া-নিহায়াহ)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَسْـمَاءَ بِنْتِ يَزِيْدَ بْنِ السَّكَنِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهَا قَالَتْ لَمَّا تُوُفِّـىَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ بَكٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ حَضْرَتْ اَبُوْ بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَنْتَ اَحَقُّ مَنْ عَلِمَ اللهَ حَقَّهٗ فَقَالَ تَدْمَعُ الْعَيْنُ وَيـَحْزَنُ الْقَلْبُ وَلَا نَقُوْلُ مَا يُسْخِطُ الرَّبَّ لَوْلَا اَنَّهٗ وَعْدٌ صَادِقٌ وَّمَوْعُوْدٌ جَامِعٌ وَّاَنَّ الْاٰخِرَ مِنَّا يَتْبَعُ الْاَوَّلَ لَوَجَدْنَا عَلَيْكَ يَا حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَجْدًا اَشَدَّ مِـمَّا وَجَدْنَا وَاِنَّا بِكَ يَا حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَمَحْزُوْنُوْنَ.
অর্থ: “হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ ইবনে সাকান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত জুদায়ী মুবারক উনার কারণে অজস্র ধারায় সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করেন। সুবহানাল্লাহ! এমতাবস্থায় সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার যথার্থ হক্ব ও অধিকার অনুধাবনে আপনিই সকলের অনুসরণীয়। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সম্মানিত চোখ মুবারক নূরুল মুহব্বত মুবারক যুক্ত, সম্মানিত হৃদয় মুবারক ব্যথিত। আর আমরা এমন কিছু বলি না, যা মহান আল্লাহ পাক উনাকে অসন্তুষ্ট করে। অর্থাৎ আমরা যা বলছি এবং করছি সবকিছুই মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক উনার কারণ। সুবহানাল্লাহ! যদি তা (সম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক) বাস্তব অঙ্গীকার ও সমবেতকারী প্রতিশ্রুতি না হতো এবং যদি এমন না হতো যে, আমাদের পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করবে, তবে অবশ্যই আমরা (হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম) আপনার জন্য যত মর্মাহত হয়েছি, বেক্বারার হয়েছি, সম্মানিত মুহব্বত মুবারক প্রকাশ করেছি, তার চেয়ে অত্যধিক মর্মাহত হতাম, বেক্বারার হতাম, সম্মানিত মুহব্বত মুবারক প্রকাশ করতাম। সুবহানাল্লাহ! আর হে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম! আপনার (জুদায়ী মুবারক উনার) কারণে আমরা অবশ্যই দুঃখ ভারাক্রান্ত, চিন্তিত, পেরেশান।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজাহ, ত্ববারনী, বিদায়া-নিহায়াহ)
সম্মানিত গোসল মুবারক ও সম্মানিত কাফন মুবারক:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক উপস্থিতিতে এবং মুবারক তত্ত্বাবধানে ও সম্মানিত দিক-নিদের্শনা মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত গোসল মুবারক ও সম্মানিত কাফন মুবারক সম্পন্ন করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
غَسَلَهُ حَضْرَتْ اَلْفَضْلُ بْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَضْرَتْ اَلْعَبَّاسُ عَلَيْهِ السَّلَامُ جَالِسَانِ
অর্থ: “ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত গোসল মুবারক করার খিদমত মুবারক-এ আনজাম দেন হযরত ফযল ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু তিনি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনারা পাশে বসা ছিলেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لَا تُدْرِجُوْهُ فِىْ اَكْفَانِهٖ حَتّٰى اَنْظُرَ اِلَيْهِ
অর্থ: “আমি উনাকে না দেখা পর্যন্ত আপনারা উনাকে সম্মানিত কাফন মুবারক-এ জড়িয়ে দিবেন না।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ, তিরমিযী)
তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দিক-নির্দেশনা মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত কাফন মুবারক সম্পন মুবারক করা হয়। সুবহানাল্লাহ! অতঃপরÑ
حُمِلَ مِنْ بَيْتِ اُمِّ بُرْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهَا عَلـٰى سَرِيْرٍ صَغِيْرٍ (فِى الْبَقِيْعِ)
অর্থ: “হযরত উম্মে বুরদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার বাড়ি থেকে একটি সম্মানিত ছোট খাটিয়া মুবারক-এ করে সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত জান্নাতুল বাক্বী’তে নিয়ে যাওয়া হলো।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ)
সম্মানিত জানাযা নামায:
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
وَصَلّٰى عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْبَقِيْعِ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত জান্নাতুল বাক্বী’ শরীফ-এ উনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত জানাযা নামায পড়ান।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ لَمَّا مَاتَ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ ابْنُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلّٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত জানাযা নামায পড়ান।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ শরীফ)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ صَلّٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ابْنِهٖ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَكَبَّرَ عَلَيْهِ اَرْبَعًا
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত জানাযা নামায সম্মানিত চার তাকবীর মুবারক-এর সাথে আদায় করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আমালী ১/৪৪১, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ৬/৩৩৫আল মাত্বালিবুল আলীয়াহ ৫/৪১০, মাজমাউ যাওয়াইদ শরীফ ৩/৫৪, কাশফুল খফা ১/৩১৩ ইত্যাদি)
সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে রাখা:
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
ثُـمَّ حُمِلَ فَرَاَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلـٰى شَفِيْرِ الْقَبْرِ وَالْعَبَّاسُ عَلَيْهِ السَّلَامُ جَالِسٌ اِلٰى جَنْبِهٖ
অর্থ: “(বর্ণনাকারী তিনি বলেন,) অতঃপর উনাকে যখন সম্মানিত খাটিয়া মুবারক-এ করে উনার মহাসম্মানিত রওযা শরীফ উনার নিকট নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমি দেখলাম যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত রওযা শরীফ উনার পাশে অবস্থান মুবারক করছেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি উনার পাশে বসা।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
فَاَمَرَ بِهٖ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنْ يُّدْفَنَ فِى الْبَقِيْعِ
অর্থ: “তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’আলইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত জান্নাতুল বাক্বী’ শরীফ সম্মানিত দাফন মুবারক করার জন্য তথা উনার সম্মানিত রওযা শরীফ স্থাপন করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক প্রদান করেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ শরীফ)
فَقِيْلَ لَهٗ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَيْنَ نَدْفِنُهٗ قَالَ عِنْدَ فَرَطِنَا عُثْمَانَ بْنِ مَظْعُوْنٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ
অর্থ: “অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরজি মুবারক পেশ করা হলো- ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা উনাকে কোথায় সম্মানিত দাফন মুবারক করবো তথা উনার সম্মানিত রওযা শরীফ নির্দিষ্ট করবো? তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমাদের অগ্রগামী হযরত উছমান ইবনে মায‘ঊন রদ্বিয়াল্লাহ তা‘য়ালা আনহু উনার নিকট।” (ইবনে সা’দ, মুস্তাদরকে হাকিম)
অপর বর্ণনায় এসেছে,
وَنَزَلَ فِىْ حُفْرَتِهٖ حَضْرَتْ اَلْفَضْلُ بْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وَحَضْرَتْ اُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ
অর্থ: “হযরত ফযল ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং উসামা ইবনে যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা উনারা সম্মানিত রওযা শরীফ-এ অবতরণ মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ)
এইভাবে উনার সম্মানিত দাফন মুবারক সম্পন্ন হয়। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত রওযা শরীফ উনার মধ্যে একটি ফাঁক মুবারক দেখলেন। তারপর তিনি নিজে মাটি টুকরা দ্বারা উক্ত ফাঁক মুবারক বন্ধ করে দিলেন। তারপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এতে কোনো উপকার নেই, ক্ষতিও নেই। তবে তা মানুষের দৃষ্টি আর্কষণ করে থাকে।
আরো বর্ণিত রয়েছে,
اَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بـِحَجَرٍ فَوُضِعَ عِنْدَ قَبْرِهٖ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَرُشَّ عَلـٰى قَبْرِهٖ عَلَيْهِ السَّلَامُ اَلْمَاءُ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একটি পাথর মুবারক নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ মুবারক দেন। অতঃপর একটি পাথর মুবারক এনে সম্মানিত রওযা শরীফ উনার নিকট রাখা হলো এবং উনার সম্মানিত রওযা শরীফ উনার উপর পানি মুবারক ছিটিয়ে দেয়া হলো।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ثُـمَّ خَرَجَ وَرَشَّ عَلـٰى قَبْرِهٖ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاَدْخَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهٗ فِىْ قَبْرِهٖ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ اَمَا وَاللهِ اِنَّهٗ لَنَبِىٌّ اِبْنُ نَبِىٍّ وَّبَكٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وسَلَّمَ وَبَكَى الْمُسْلِمُوْنَ حَوْلَهٗ حتَّى ارْتَفَعَ الصَّوْتُ ثُـمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَدْمَعُ الْعَيْنُ وَيَـحْزَنُ الْقَلْبُ. وَلَا نَقُوْلُ مَا يُغْضِبُ الرَّبَّ وَاِنَّا عَلَيْكَ يَا حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَمَحْزُوْنُوْنَ.
অর্থ: “তারপর বের হয়ে এসে উনার সম্মানিত রওযা শরীফ উনার উপরে পানি মুবারক ছিটিয়ে দিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিত রওযা শরীফ-এ সম্মানিত হাত মুবারক প্রবেশ করালেন। অতঃপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, সাবধান, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, নিশ্চয়ই (সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম) তিনি সম্মানিত নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার জন্য উনার সম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জুদায়ী মুবারক উনার কারণে উনার সম্মানিত চক্ষু মুবারক দিয়ে অজস্র ধারায় সম্মানিত নূরুল মুহব্বত মুবারক প্রবাহিত করলেন এবং উনার সাথে সাথে সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও কান্না মুবারক করতে লাগলেন। এমনকি আওয়াজ মুবারক উঁচু হয়ে গেলো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সম্মানিত চোখ মুবারক নূরুল মুহব্বত মুবারক যুক্ত, হৃদয় মুবারক ব্যথিত আর আমরা এমন কিছু বলি না- যা মহান আল্লাহ পাক উনাকে অসন্তুষ্ট করে। হে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম! আপনার (জুদায়ী মুবারক উনার) কারণে আমরা অবশ্যই দুঃখ ভারাক্রান্ত, চিন্তিত, পেরেশান।” (ইবনে আসাকির, বিদায়া-নিহায়া, কানযুল উম্মাল ইত্যাদি)
অপর বর্ণনায় রয়েছে,
تَدْمَعُ الْعَيْنُ وَيَـحْزَنُ الْقَلْبُ وَلَا نَقُوْلُ اِلَّا مَا يُرْضِى اللهَ تَعَالـٰى وَاللهِ اِنَّا بِفَرَاقِكَ يَا حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَمَحْزُوْنُوْنَ.
অর্থ: “সম্মানিত চোখ মুবারক নূরুল মুহব্বত মুবারক যুক্ত, হৃদয় মুবারক ব্যথিত। আর আমরা যা কিছু বলি তা মহান আল্লাহ পাক উনাকে সন্তুষ্ট করে। হে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম! আপনার জুদায়ী মুবারক উনার কারণে আমরা অবশ্যই দুঃখ ভারাক্রান্ত, চিন্তিত, পেরেশান।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম, আবূ দাঊদ, আহমদ, ত্ববারনী, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ)
ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেই বেমেছাল মুহব্বত মুবারক প্রকাশ করেছেন, এর মাধ্যম দিয়েই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কত বেমেছাল। যেটা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর চিন্তা ও কল্পনার বাইরে। সুবহানাল্লাহ!
তাই সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযের উপর ফরয হচ্ছে ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনাকে মুহব্বত মুবারক করা, উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক আলোচনা করা।
সম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন সূর্যের শোক প্রকাশ করা:
সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খাদিম হচ্ছে সমস্ত কায়িনাতবাসী। উনাদের গোলামী করার জন্য সমস্ত কায়িনাত বেক্বারার-পেরেশান। সমস্ত কায়িনাত উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ গরক্ব। তারা দায়িমীভাবে উনাদের সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করে থাকে, উনাদের তা’যীম-তাকরীম করে থাকে। সুবহানাল্লহ! আর উনাদের জুদায়ী মুবারকের কারণে শোক প্রকাশ করে থাকে। সেটাই দেখা গিয়েছে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন জিন-ইনসান তো অবশ্যই এমনকি সারা কায়িানাত শোক প্রকাশ করেছিলো। এমনকি সূর্যও শোক প্রকাশ করেছিলো। এই সম্পর্কে সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَلْـمُغِيْرَةِ بْنِ شُعْبَةَ رَضِىَ الله تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ اِنْكَسَفَتِ الشَّمْسُ يَوْمَ مَوْتِ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ النَّاسُ لِـمَوْتِ حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ.
অর্থ: “হযরত মুগীরা বিন শু’বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিলো তথা সূর্য অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়েছিলো। অর্থাৎ সূর্যও শোক প্রকাশ করেছিলো তথা সমস্ত ক্বায়িনাতই শোক প্রকাশ করেছিলো। তার বহিঃপ্রকাশ হলো সূর্যের মাধ্যম দিয়ে। তখন লোকেরা বলাবলি করতে লাগলেন, ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের কারণে সূর্যগ্রহণ হয়েছে, সূর্য শোকাহত হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ শরীফ)
মূলত, এটা একটি কুদরতী বিষয়। যদিও স্বাভাবিকভাবে চন্দ্রের ২৬-২৭ তারিখে সূর্যগ্রহণ হয়। কিন্তু ইবনু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আন নূরুর রাবি’ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানার্থে উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের দিন ১০ই রবী‘উল আউওয়াল শরীফ সূর্যগ্রহণ হয়েছিলো তথা সূর্য শোক প্রকাশ করেছিলো। সুবহানাল্লাহ! এই বিষয়টি সমস্ত ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা এক বাক্যে মেনে নিয়েছেন। কেউ কেউ এই মতের মুখালিফদের বিরুদ্ধে শক্ত জবাবও দিয়েছেন।
http://al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=2&textid=14757
http://al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=2&textid=14757
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন