নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা অন্যান্য মানুষের মতো বলতে চায় তারা মূলত আশাদ্দুদ দরজার জাহিল ও পথভ্রষ্ট। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্যান্য মানুষের মতো মনে করা সুস্পষ্ট কুফরীর শামিল। মূলতঃ যারা কাফির কেবল তারাই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তাদের মতো মানুষ বলে মনে করতো।
যেমন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বওম এবং আদ ও ছামূদ গোত্রের লোকেরা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে বে-আদবী করতে গিয়ে বলেছিলো-
ان انتم الا بشر مثلنا
অর্থাৎ আপনারা তো আমাদের মতোই বাশার (মানুষ)। (পবিত্র সূরা ইব্রাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)
হযরত হূদ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে কাফিরেরা বলেছিলো-
ما هذا الا بشر مثلكم يأكل مما تأكلون منه ويشرب مما تشربون
অর্থাৎ ইনি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। তোমরা যা আহার করো, তিনিও তা আহার করেন এবং তোমরা যা পান করো তিনিও তা পান করেন। (পবিত্র সূরা মু’মিনূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
এমনকি যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কেও কাফিরেরা বলেছিলো-
هل هذا الا بشر مثلكم افتاتون السحر وانتم تبصرون.
অর্থ: “ইনি তো তোমাদের মতো ‘বাশার’ ব্যতীত কেউ নন। তা সত্ত্বেও কি তোমরা দেখে শুনে জাদুর শিকার হবে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)
কাজেই, উল্লিখিত আয়াতে কারীমাসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিজের মতো মানুষ বলা কাফিরদের অন্যতম একটি স্বভাব।
মূলত কাদিয়ানীরা যেমন خاتم النبين এর মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করে খতমে নুবুওওয়াতকে অস্বীকার করে থাকে তদ্রƒপ বাতিল আক্বীদা ও ফিরক্বার লোকেরা পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ ও পবিত্র সূরা হামীম সাজদা শরীফ উনার আয়াত শরীফ-
قل انـما انا بشر مثلكم يوحى الى
উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ না করে বরং মেছালী অর্থ গ্রহণ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাদের মতো মানুষ বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!
প্রকৃতপক্ষে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার হাক্বীক্বী অর্থ ও মর্ম হলো- “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ওই মুশরিকদের বলে দিন যে, আমি তোমাদের মেছাল (ছূরতান) একজন বাশার বা মানুষ, (হাক্বীক্বতান আমি শ্রেষ্ঠতম রসূল) আমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে। সুবহানাল্লাহ
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার শ্রেষ্ঠতম রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্য কারো মতো মোটেও বলা হয়নি। এছাড়া উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যেই
يوحى الى
অর্থাৎ “আমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে” এ বাক্যটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্য মানুষ থেকে আলাদা করে দিয়েছে। কেননা অন্য মানুষের নিকট ওহী মুবারক আসে না।
উদাহরণস্বরূপ حيوان ‘হাইওয়ান’ বা প্রাণী বলতে মানুষকেও বুঝায় এবং অন্যান্য জীব-জন্তুকেও বুঝায়। তবে কোন মানুষ কি একথা বলবে যে, গরু-ছাগল, ঘোড়া-গাধা ইত্যাদির মতো তারা ‘হাইওয়ান’। নাউযুবিল্লাহ!
মূলত মানুষ হাইওয়ান বটে কিন্তু গরু-ছাগল, ঘোড়া-গাধা প্রভৃতি হাইওয়ানের মতো নয়। কেননা মানুষ হলো حيوان ناطق ‘হাইওয়ানে নাতিক্ব’ অর্থাৎ বাকশক্তিসম্পন্ন জীব। মানুষ বিবেক, জ্ঞান ও বাক শক্তির অধিকারী। যেরূপ এ ناطق (নাতিক্ব) বা ‘বাকশক্তি সম্পন্ন’ শব্দটি মানুষকে অন্যান্য জীব-জন্তু হতে পৃথক করে দিয়েছে তদ্রƒপ يوحى الى (আমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে) এ বাক্য মুবারক দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্য মানুষ থেকে পৃথক করে দিয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ينساء النبى لستن كاحد من النساء
অর্থ: হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসা আলাইহিন্নাস সালাম! অর্থাৎ উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম আপনারা অন্য কোন মহিলাদের মতো নন। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)
এখানে বিশেষভাবে জানা আবশ্যক যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা নিসা আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যদি অন্য কোন মহিলাদের মতো না হন তাহলে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি করে অন্য পুরুষ তথা অন্য মানুষের মতো হবেন? প্রকৃতপক্ষে তিনি কারো মতোই নন। যেমন এ প্রসঙ্গে ছহীহ বুখারী শরীফ ও ছহীহ মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لست كاحد منكم
অর্থাৎ- “আমি তোমাদের কারো মতো নই।”
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
ايكم مثلى انى ابيت يطعمنى ربى ويسقينى
অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে কে আছো আমার মতো। আমি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে রাত্রি যাপন করি, তিনিই আমাকে খাওয়ান এবং তিনিই আমাকে পান করান।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির পর থেকে যমীনে আগমনের পূর্ব পর্যন্ত শুধুমাত্র নূর মুবারক উনার ছূরত বা আকৃতি মুবারক-এ ছিলেন। আর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নূর মুবারক উনার দ্বারা সৃষ্টি বলা হয়। তাই বলে কি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কখনও একথা বলেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের মতো? বললে কি শুদ্ধ হতো? কখনোই না। তাহলে মেছালী ছূরত মুবারক উনার কারণে তিনি অন্য মানুষের মতো হন কি করে?
আরো বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের তেইশ বছর যিন্দিগী মুবারক-এ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি চব্বিশ হাজার বার সাক্ষাৎ মুবারক করেছেন। এরমধ্যে তিনি অনেক সময় ছাহাবী হযরত দাহইয়াতুল কলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুবারক ছূরত বা আকৃতিতে সাক্ষাৎ মুবারক করেছেন। এছাড়া পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ উনার ১৭ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার মানব আকৃতি ধারণ করার কথা উল্লেখ করেছেন। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেও ‘বাশার’ শব্দটি উল্লেখ আছে। এখন বাশার মেছালী ছূরত মুবারক ধারণ করার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা তাদের মতো সাধারণ মানুষ বলছে, তারা তাহলে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকেও তাদের মতো মানুষ বলুক। কিন্তু তারা তো তা বলছে না।
একইভাবে জিনেরাও মানুষের ছূরত ধারণ করে চলাফেরা করে, মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করে সেজন্য তাদেরকে কি মানুষ বলা শুদ্ধ হবে? কস্মিনকালেও নয়।
উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে কটূক্তি করে যারা বলছে যে, তিনি তাদের মতোই সাধারণ মানুষ। নাঊযুবিল্লাহ! যারা এরূপ জঘন্য উক্তি করছে তারা কি কখনও তাদের দলের আমীর, উস্তাদ ও পিতা-মাতার দাঁতকে কুকুরের দাঁতের মতো বলবে? যদিও কুকুরের দাঁত তাদের আমীর, মুরুব্বী, উস্তাদ ও পিতা-মাতার দাঁতের চেয়েও শক্ত।
আরো উল্লেখ্য, জগৎ কুখ্যাত নমরূদ, সাদ্দাদ, কারূন, ফিরআউন, আবূ জাহিল, আবূ লাহাব এরাও তো মানুষ, তাহলে মাঝে মাঝে ওইসব কুলাঙ্গাররা নিজেদের বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য বলুক যে, সে এবং তাদের আমীর ও মুরুব্বী গং নমরূদ, সাদ্দাদ, কারূন, ফিরআউন, আবূ জাহিল, আবূ লাহাবের মতোই।
এসব পথভ্রষ্ট জাহিলদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি যথার্থই ইরশাদ মুবারক করেছেন-
من اتخذ الهه هواه واضله الله على علم وختم على سمعه وقلبه وجعل على بصره غشاوة
অর্থ: “যে ব্যক্তি তার খেয়াল-খুশিকে স্বীয় উপাস্য স্থির করে নেয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি জেনে শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দেন এবং তার চোখের উপর আবরণ বা পর্দা রেখে দেন।” (পবিত্র সূরাতুল জাছিয়াহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)
ফলে, এদের পক্ষে হক্ব জানা, বুঝা, অনুধাবন করা এবং তা মানা ও গ্রহণ করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
http://al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=1&textid=12397
http://al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=1&textid=12397

0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন