নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিনে কামিল হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং অন্যান্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি মুহব্বত করবে”।
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন সমস্ত কায়িনাতের হাক্বীক্বী ঈদ।
\
কারণ এদিন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ যমীনে তাশরীফ মুবারক আনেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন সৃষ্টির মূল, যিনি সারা জাহানের জন্য রহমত, যাঁকে সৃষ্টি না করলে মহান আল্লাহ পাক্ তিনি কোনো কিছুই সৃষ্টি করতেন না। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি পৃথিবীতে না আসতেন, তাহলে এ সুন্দর পৃথিবী ও মাখলুকাত কিছুই হতো না। এমনকি আপাতভাবে আমারা যেদিনগুলোকে সবচেয়ে বেশি খুশির দিন হিসাবে মনে করি এবং ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালন করি সেদিনগুলোরও সৃষ্টি হতো না।
অর্থাৎ পবিত্র ঈদুল ফিতর, পবিত্র ঈদুল আযহা, পবিত্র শবে বরাত, পবিত্র শবে ক্বদর উনাদেরও সৃষ্টি হতো না।
যেহেতু মহাপবিত্র শাহরুল আ’যম শরীফ মাস বিশেষভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পৃক্ত, তাই এই মাস যথাযথভাবে পালন করার জন্য মুবারক খিদমতের আঞ্জাম দেয়া সকল মুসলমান উনাদের দায়িত্ব-কর্তব্য।
পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ উনার ৫৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি অনুগ্রহ ও রহমত হিসাবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন; সেজন্য তারা যেন ঈদ উদযাপন তথা খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসব কিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।”
দিনের শ্রেষ্ঠ দিন ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ। সকল মাসের সাইয়্যিদ পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস। সুমহান এ দিন ও মাসকে সম্মান করা প্রতিটি মুসলমান তো অবশ্যই, জিন-ইনসানসহ কুল-কায়িনাতের সবার জন্যই ফরয।
কিন্তু এ মহান দিন ও মাসকে পেয়েও যারা নিজেদের গুনাহখতা ক্ষমা করাতে পারলো না, এ দিনের যথাযথ হক্ব আদায় করতে পারলো না, এ দিনের যথাযথ তা’যীম-তাকরীম, সম্মান-আদব, প্রদর্শন করতে পারলো না, বখিলীর কারণে এ দিনে যথাসাধ্য খরচ করতে পারলো না, এরা হালাক, এরা ধ্বংসপ্রাপ্ত। কারণ এরা সৃষ্টির মাঝে বড়ই বদনছীব।
মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহমতে যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে ইতিহাসে নজিরবিহীন অনন্তকালব্যাপী জারিকৃত সুমহান মাহফিল অনুষ্ঠানের জন্য মুবারক আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এই দেশ। এদেশে সরকার যদি ১.৫% সংখ্যালঘুর জন্য তাদের পূজা-পার্বণ ও উৎসবে অনুদান দিতে পারে, তবে মুসলমান উনাদের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ- সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আযম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে অবশ্যই বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো বেশি বেশি অনুদান দিতে হবে।
এদিন উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশ করা, খরচ করা শুধু সরকার নয়; সকলের জন্যই ফরযে আইন। এ উপলক্ষে গরিব ও অভাবী লোকদের প্রতি সরকারের আরো বেশি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। তারা যেন ইতমিনানে এদিনে ঈদ তথা খুশি উদযাপন করতে পারে, সেজন্যে ছিন্নমূল মানুষদেরকে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়াও মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে দেশব্যাপী খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা করা উচিত। যেহেতু আমরা মুসলমান, তাই হারাম কাজে টাকা খরচ না করে আমাদের সরকারের উচিত- এদিনে টাকা খরচ করা। অন্যান্য খাতে যতো খরচ এই খাতে তার চেয়ে অধিক খরচ করা উচিত।
এটা এদেশের সকল মুসলমান উনাদের প্রাণের দাবি।
শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উপলক্ষে লোকজন একত্রিত করলো, খাদ্য তৈরি করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং উত্তমভাবে আমল করলো উক্ত ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ছিদ্দীক্ব, শহীদ, ছালিহ উনাদের সাথে উঠাবেন এবং জান্নাতুন নায়ীমে উনার ঠিকানা হবে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’মাতুল কুবরা)।
এখন ফিকিরের বিষয়, আমরা তো পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে বলে থাকি, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি উনাদের পথ দান করেন যারা নিয়ামতপ্রাপ্ত। এখন কারা নিয়ামত প্রাপ্ত?
নবী, ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছালিহ উনারা হচ্ছেন নিয়ামতপ্রাপ্ত।
কঠিন হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ও ছালিহ উনাদের সাথে হাশর-নশর ও জান্নাতে অবস্থান হবে যারা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করবে। এটা তো বিরাট সৌভাগ্যের বিষয় ঈমানদার উনাদের জন্য। তাই জিন-ইনসানসহ সমস্ত কায়িনাতের জন্য পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ফরযে আইন।

0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন