সম্মানিত সূরা তাহরীম শরীফ উনার প্রথমোক্ত পাঁচখানা আয়াত শরীফ নিয়ে বাত্বিল ফেরক্বার লোকেরা নানা কুফরীমূলক বক্তব্য পেশ করে থাকে এবং মানুষের ঈমান-আক্বীদা নষ্ট করে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ! বিভিন্ন কিতাব এবং বিভিন্ন তাফসীরগ্রন্থগুলোতেও নানা এলোমেলো ও কুফরীমূলক বক্তব্য রয়েছে। বর্ণনাকারীরা ইসরাঈলী বর্ণনার দ্বারা বিষয়টিকে এলোমেলো করে ফেলেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! অনেকে এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ ‘আশার (হযরত মারিয়াহ ক্বিবতিয়াহ) আলাইহাস সালাম উনাকে জড়িয়ে উনার সম্মানিত শান মুবারক উনার খিলাফ বিভিন্ন কুফরীমূলক বক্তব্য পেশ করে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ! বিশেষ করে এই প্রথমোক্ত পাঁচখানা আয়াত শরীফ উনাদের সম্মানিত শানে নুযূল মুবারক এবং সম্মানিত তাফসীর মুবারক সম্পর্কে বাত্বিল ৭২ ফেরক্বার লোকেরা; এমনকি হক্বপন্থী দাবীদারও তাদের লিখিত কিতাবসমূহে, তাফসীর ও হাদীছ শরীফের শরাহগ্রন্থগুলোতে দলীলবিহীন, মনগড়া নানা এলোমেলো ও কুফরীমূলক বক্তব্য উল্লেখ করেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! যেমন তারা উল্লেখ করেছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নাকি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য হালালকে হারাম ঘোষণা করেছেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! তিনি নাকি গুণাহ করেছেন এজন্য উনাকে তওবা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা নাকি পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ করেছেন, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! দলাদলি করেছেন, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! ঝগড়া-ফাসাদ করেছেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! উনারা নাকি মিথ্যা কথা বলেছেন, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক উনার খিলাফ কাজ করেছেন, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! উনার বিরোধীতা করেছেন, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! আমানতের খিয়ানত করেছেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! এছাড়াও নানা কুফরীমূলক বক্তব্য উল্লেখ করেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! ইমামুল মুফাসসিরীন মিনাল আউওয়ালীনা ইলাল আখিরীন, মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রকৃতপক্ষে যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তাহরীমের আয়াত শরীফ উনার মধ্যে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান ও সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক উনার বিষয়টিই স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার প্রকৃত যে শানে নুযূল বা ঘটনা মুবারক সেটা হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মধু খাওয়া খুব পছন্দ করতেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘য়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান (হযরত যাইনাব বিনতে জাহ্শ) আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ-এ মধু পান করেছিলেন। প্রত্যেক মধুতে একটা ঘ্রাণ থাকে। এক এক ফুলের মধুর মধ্যে এক একটা ঘ্রাণ থাকে। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেক খাদ্য, তরী-তরকারী, মাছ, গোশত প্রত্যেকটাতে আলাদা আলাদা একটা ঘ্রাণ থেকে থাকে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট যেই ঘ্রাণগুলো রুচি সম্মত হতো না, সেগুলো তিনি পছন্দ করতেন না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘য়াহ আত্বওয়ালু ইয়াদান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ-এ যেই মধু মুবারক পান করেছিলেন, সেই মধুর মধ্যে মাগাফীর ফুলের ঘ্রাণ ছিলো। সেই বিষয়টিই উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছানিয়াহ (হযরত সাওদাহ বিনতে যাম‘আহ) আলাইহাস সালাম তিনি এবং উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবি‘য়াহ ইবনাতু আবীহা (হযরত হাফছাহ) আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলেছিলেন। বলার কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছিলেন, যদি এই ঘ্রাণই হয়, তাহলে তিনি মধু পান করবেন না। এই বিষয়টিকেই কেন্দ্র করে সম্মানিত সূরা তাহরীম শরীফ উনার প্রথমোক্ত পাঁচখানা আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللهُ لَكَ تَبْتَغِي مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ .قَدْ فَرَضَ اللهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ أَيْمَانِكُمْ وَاللهُ مَوْلَاكُمْ وَهُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ. وَإِذْ أَسَرَّ النَّبِيُّ إِلَى بَعْضِ أَزْوَاجِهِ حَدِيثًا فَلَمَّا نَبَّأَتْ بِهِ وَأَظْهَرَهُ اللهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَهُ وَأَعْرَضَ عَنْ بَعْضٍ فَلَمَّا نَبَّأَهَا بِهِ قَالَتْ مَنْ أَنْبَأَكَ هَذَا قَالَ نَبَّأَنِيَ الْعَلِيمُ الْخَبِيرُ. إِنْ تَتُوبَا إِلَى اللهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوبُكُمَا وَإِنْ تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَإِنَّ اللهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيرٌ. عَسَى رَبُّهُ إِنْ طَلَّقَكُنَّ أَنْ يُبْدِلَهُ أَزْوَاجًا خَيْرًا مِنْكُنَّ مُسْلِمَاتٍ مُؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَائِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَائِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَأَبْكَارًا. প্রথম আয়াত শরীফ উনার অর্থ ও তাফসীর বা ব্যাখ্যা يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ لِـمَ تُـحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللهُ لَكَ تَبْتَغِي مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ অর্থ: “হে আমার সম্মানিত নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যা হালাল করেছেন, আপনি তা কী কারণে হারাম করলেন? আপনি কি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য এটা করেছেন? যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।” শব্দার্থ: لِـمَ تُـحَرِّمُ কেন বা কি কারণে আপনি হারাম করেন বা করলেন, تَبْتَغِي আপনি চান, প্রত্যাশা করেন, مَرْضَاتَ সন্তুষ্টি, খুশি। তাফসীর বা ব্যাখ্যা: সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার শুরুতে মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে সম্বোধন মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি উনাকে সরাসরি নাম মুবারক দ্বারা সম্বোধন করেননি। বরং তিনি বলেছেন, يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ অর্থ: “হে আমার সম্মানিত নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!” তারপর তিনি বলেছেন, لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللهُ لَكَ অর্থ: “যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যা হালাল করেছেন, আপনি তা কী কারণে হারাম করলেন?” এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন, وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى. إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক ব্যতীত কোন কথা বলেন না, কোন কাজ করেন না।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা নজম শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৩-৪) তাহলে তিনি যে মধু পান করা হারাম করলেন, তিনি কি এটা সম্মানিত ওহী মুবারক উনার বাইরে করেছেন? না‘ঊযুবিল্লাহ! কস্মিনকালেও নয়। তিনি এটা সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমেই করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর বলা হয়েছে, تَبْتَغِي مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ অর্থ: “আপনি কি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে সন্তুষ্ট মুবারক করার জন্য এটা করেছেন?” কখনো না। কারণ সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, وَاللهُ وَرَسُولُهُ اَحَقُّ اَنْ يُرْضُوْهُ اِنْ كَانُوْا مُؤْمِنِيْنَ. অর্থ: “তারা যদি ঈমানদার হয়ে থাকে তাহলে তারা যেন মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু উনাকে সন্তুষ্ট করে। উনারাই সন্তুষ্টি পাওয়ার সমধিক হকদার।” সুবহানাল্লাহ! এই আয়াত শরীফ খাছভাবে সমস্ত উম্মতের জন্য নাযিল করা হয়েছে। আর আমভাবে নাযিল করা হয়েছে, رِضْوَان مِنَ اللهِ اَكْبَرُ অর্থাৎ “মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হচ্ছেন সবচেয়ে বড়।” সুবহানাল্লাহ! আয়াত শরীফ নাযিল হলো অর্থাৎ বলা হলোÑ মহান আল্লাহ পাক উনাকে সন্তুষ্ট করতে হবে। তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি করে মহান আল্লাহ পাক উনাকে সন্তুষ্ট না করে অন্য কাউকে সন্তুষ্ট করার জন্য কোন আমল করতে পারেন? না‘ঊযুবিল্লাহ! অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা করেছেন তা মহান আল্লাহ পাক উনাকে সন্তুষ্ট করার জন্যই করেছেন। কাজেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে, হালালটাকে হারাম করেছেন, সেটা মহান আল্লাহ পাক উনাকে সন্তুষ্ট করার জন্যই করেছেন এবং সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমেই করেছেন। সুবহানাল্লাহ! এরপর বলা হয়েছে, وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ অর্থ: “আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।” বাতিল ফেরক্বার লোকেরা বলে থাকে যে, এখানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে হালালকে হারাম করেছেন, এই জন্য উনাকে ইস্তিগফার করতে বলা হয়েছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! তিনি নাকি গুণাহ করেছেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি নাকি উনার গুণাহ ক্ষমা করেছেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! মূলত, এখানে বলা হয়েছে, যারা এই সম্মানিত আয়াত শরীফ নিয়ে চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করবে, এলোমেলো ব্যাখ্যা করবে, তাদেরকে ইস্তিগফার করতে হবে। যদি তারা তওবা করে, ইস্তিগফার করে, তাহলে তাদের তওবা কবুল করা হবে, তাদেরকে দয়া করা হবে। কাজেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম তিনি সম্মানিত ওহী মুবারক ব্যতীত কোন কথা বলেন না, কোন কাজ করেন না। সুবহানাল্লাহ! দ্বিতীয় আয়াত শরীফ উনার অর্থ ও তাফসীর বা ব্যাখ্যা قَدْ فَرَضَ اللهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ أَيْمَانِكُمْ وَاللهُ مَوْلَاكُمْ وَهُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ. অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের জন্য আপনাদের শপথ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ তিনি কসমের কাফ্ফারার বিষয়টি নির্ধারণ করে দিয়েছেন, শপথ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বন্ধু। সুবহানাল্লাহ! আর মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত বিষয় জানেন এবং প্রজ্ঞাময়।” শব্দার্থ: فَرَضَফরয করেছেন, ধার্য করেছেন, জারি করেছেন, নির্ধারণ করেছেন, বর্ণনা করেছেন, تَحِلَّةَ অব্যাহতি, أَيْمَانِكُمْ আপনাদের কসমসমূহ, শপথসমূহ, مَوْلَاكُمْ আপনাদের বন্ধু, আপনার বন্ধু, অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বন্ধু। তাফসীর বা ব্যাখ্যা: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কসম বা শপথ যে করেছেন সেটা সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমেই করেছেন। আবার এই শপথ বা কসমের যে কাফফারা সেটাও সম্মানিত ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! যাতে এর মাধ্যম দিয়ে শপথ থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ পাক তিনি এটা নির্ধারণ করে দিয়েছেন যাতে উম্মত পরবর্তীতে কসমের কাফফারা আদায় করে এর থেকে সহজে অব্যাহতি লাভ করতে পারে। সুবহানাল্লাহ! তৃতীয় আয়াত শরীফ উনার অর্থ ও তাফসীর বা ব্যাখ্যা وَإِذْ أَسَرَّ النَّبِيُّ إِلَى بَعْضِ أَزْوَاجِهِ حَدِيثًا فَلَمَّا نَبَّأَتْ بِهِ وَأَظْهَرَهُ اللهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَهُ وَأَعْرَضَ عَنْ بَعْضٍ فَلَمَّا نَبَّأَهَا بِهِ قَالَتْ مَنْ أَنْبَأَكَ هَذَا قَالَ نَبَّأَنِيَ الْعَلِيمُ الْخَبِيرُ. অর্থ: “আর যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবি‘য়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম) উনার কাছে একটি বিষয় (তিনি আর মধু পান করবেন না) আস্তে আস্তে বললেন। তিনি আবার এই বিষয়টি আরেকজন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম) উনাকে অবগত করলেন, এই বিষয়টি জানালেন। যিনি খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আবার বিষয়টি ওহী মুবারক করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জানিয়ে দিলেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনাকে (মহান আল্লাহ পাক তিনি যা ওহী মুবারক করেছেন তার থেকে) কিছু বিষয় জরুরত আন্দাজ প্রকাশ করলেন, আর কিছু বিষয় যেগুলো জরুরী না সেগুলো প্রকাশ করলেন না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সেই উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম (সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবি‘য়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম) উনাকে বিষয়টি অবগত করালেন, তখন তিনি জানতে চাইলেন এই বিষয়টি কে আপনাকে জানিয়েছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যিনি ‘আলীমুল খবীর মহান আল্লাহ পাক যিনি সবকিছু জানেন এবং খবর রাখেন তিনি জানিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! শব্দার্থ: أَسَرَّ তিনি গোপনে বললেন, চুপে চুপে বললেন, আস্তে আস্তে বললেন, حَدِيثًا একটি কথা,نَبَّأَتْ তিনি অবগত করলেন, জানালেন, أَظْهَرَهُ তিনি উনাকে প্রকাশ করলেন, স্পষ্ট করলেন, জানিয়ে দিলেন, عَرَّفَ তিনি জানালেন, অবহিত করলেন, বললেন, أَعْرَضَ তিনি পরিহার করলেন, পরিত্যাগ করলেন, বিরত থাকলেন, অর্থাৎ বললেন না, أَنْبَأَكَ তিনি আপনাকে অবগত করলেন, জানালেন, نَبَّأَنِيَ আমাকে অবগত করেছেন, জানিয়েছেন, الْخَبِيرُ মহাবিজ্ঞ, সর্বজ্ঞ, যিনি সবকিছু জানেন এবং খবর রাখেন। চতুর্থ আয়াত শরীফ উনার প্রথম অংশ উনার অর্থ ও তাফসীর বা ব্যাখ্যা إِنْ تَتُوبَا إِلَى اللهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوبُكُمَا অর্থ: “যদি আপনারা (উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রাবি‘য়াহ ইবনাতু আবীহা আলাইহাস সালাম) তওবা করেন, রুজু হন যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে, অবশ্যই আপনাদের অন্তর মুবারক রুজু হয়ে গেছে। (উনারা তো তওবা করেছেনই, মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু হয়েছেনই। যার কারণে উনাদের অন্তর মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে রুজু আছে, রুজু হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ!) শব্দার্থ: إِنْ تَتُوبَا যদি আপনারা দু’জন তওবা করেন, রুজু হন, فَقَدْ صَغَتْ ঝুঁকে গেছে, রুজু হয়ে গেছে। তাফসীর বা ব্যাখ্যা: হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মাঝে ফানা-বাক্বা এবং উনাদের সম্মানিত অন্তর মুবারক যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে দায়িমীভাবে রুজু আছে এই বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে গেছে তাখয়ীরের আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে। সুবহানাল্লাহ! তাখয়ীরের আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান ও পবিত্রতা মুবারক উনাদের বিষয়টিই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। যদিও তাখয়ীরের পবিত্র আয়াত শরীফ নিয়ে বাতিল-ফিরক্বার লোকেরা অনেক চূ-চেরা ক্বীল-ক্বাল করে থাকে, বিভিন্ন এলোমেলো বক্তব্য পেশ করে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ! অথচ এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার বিষয়টি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! খায়বার বিজয়ের পরের ঘটনা। তখন মুসলমান উনাদের অনেক গণীমতের মাল লাভ হয়েছিলো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা সকলেই এর মাধ্যমে ফায়দা গ্রহণ করছিলেন। তখন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ লিবাস (পোশাক) মুবারক উনার বিষয়ে, ভাতার বিষয়ে জানালেন। কারণ উনাদেরকে বাৎসরিক যে ভাতা মুবারক দেয়া হতো, সেটা এক মাসও যেতো না, উনারা দান-খয়রাত করে শেষ করে দিতেন। সুবহানাল্লাহ! অনুরূপভাবে উনাদেরকে যে লেবাস মুবারক দেয়া হতো, সেটাও উনারা দান-খয়রাত করে দিতেন। ফলে উনাদের শুধু পরিধাণকৃত লেবাস মুবারকখানাই থাকতো। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ এমন হতো যে, দান করতে করতে উনাদের শুধু এক সেট সম্মানিত লিবাস মুবারক থাকতো। ফলে উনারা আরো বেশি বেশি দান-খয়রাত করার জন্য এবং মানুষদেরকে আরো বেশী বেশী হাদিয়া-তোহফা দেয়ার জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সম্মানিত লিবাস মুবারক ও ভাতা মুবারক উভয়ের জন্য আরজি মুবারক পেশ করেছিলেন। উনারা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আরজি মুবারক পেশ করেননি। সুবহানাল্লাহ! তখন যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান এবং পবিত্রতা মুবারক উনাদের বিষয়টি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার জন্য তাখয়ীরের পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ إِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا فَتَعَالَيْنَ أُمَتِّعْكُنَّ وَأُسَرِّحْكُنَّ سَرَاحًا جَمِيلًا. وَإِنْ كُنْتُنَّ تُرِدْنَ اللهَ وَرَسُولَهُ وَالدَّارَ الْآخِرَةَ فَإِنَّ اللهَ أَعَدَّ لِلْمُحْسِنَاتِ مِنْكُنَّ أَجْرًا عَظِيمًا. অর্থ: “হে আমার সম্মানিত নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে বলে দিন যে, যদি আপনারা দুনিয়া ও দুনিয়ার সৌন্দর্য্য চেয়ে থাকেন, তাহলে আসুন বা বলুন, আপনাদের সমস্ত চাহিদা পূরণ করে দেয়া হবে এবং উত্তমভাবে আপনাদের রুখসতেরও ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। আর যদি আপনারা যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে চান, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চান, পরকাল চান, তাহলে নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের মধ্যে যারা পবিত্রা মহিলা উনাদের জন্য অনেক বড় নিয়ামত মুবারক তৈরি করে রেখেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ২৮-২৯) যখন এই সম্মানিত আয়াত শরীফ নাযিল হলো, তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সকলকে বিশেষ করে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, সম্মানিত আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো, আপনি কিন্তু তাড়াহুড়া করে জবাব দিবেন না। আপনার সম্মানিত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করে, উনাদের থেকে জেনে জবাব দিবেন। এই কথা মুবারক বলে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে উপরোক্ত সম্মানিত আয়াত শরীফগুলো তিলাওয়াত মুবারক করে শুনালেন। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি শুনে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য আমার সম্মানিত আব্বা-আম্মা আলাইহিমাস সালাম উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে হবে না। এটার জবাব আমি নিজেই দিবো। এখানে যেই বিষয়টি বলা হয়েছে, সেটা হচ্ছে যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে, উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং পরকালকে যদি আমরা চাই, তাহলে সেটা যেন আমরা বলি। আপনি যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা। ঠিক আমরাও আপনার মধ্যে ফানা ও বাক্বা হওয়ার জন্যই আপনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ এসেছি। সুবহানাল্লাহ! আমরা আপনার মাঝেই ফানা ও বাক্বা। সুবহানাল্লাহ! একমাত্র আপনার হাক্বীক্বী রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার জন্যই আমরা আপনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ এসেছি। সুবহানাল্লাহ! আমরা অন্য কোন উদ্দেশ্যে আপনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ আসিনি। সুবাহানাল্লাহ! অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকেও এই প্রশ্ন মুবারক করলেন। উনারা প্রত্যেকেই একই জবাব মুবারক দিলেন। সুবহানাল্লাহ! সম্মানিত আয়াত শরীফ উনাদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যে, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের মধ্যে ফানা ও বাক্বা সেই বিষয়টিই স্পষ্ট করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! তাহলে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক সম্পর্কে কি করে চু-চেরা ও ক্বিল-ক্বাল করা যেতে পারে? আর যারা করবে তারা কি করে ঈমানদার হিসেবে সাব্যস্ত হবে? না‘ঊযুবিল্লাহ! উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার অনেকবার তাফসীর মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি বলতেন, দেখ এটা সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার সম্মানিত আয়াত শরীফ। এটা ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। কিন্তু এমন এক সময় আসবে আমরাও থাকবো না, তোমরাও থাকবে না। মানুষ এটাতে ভুল বুঝতে পারে। এইজন্য তিনি বিশেষ বিশেষ মাহফিলে, মজলিসে এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যা করতেন। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যদি চান তাহলে উহুদ পাহাড় স্বর্ণ হয়ে আপনার পিছনে পিছনে ঘুরবে। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছিলেন, উহুদ পাহাড় স্বর্ণ হয়ে আমার পিছনে পিছনে ঘুরুক, সেটা আমার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি তো আপনার মুহব্বত-মা’রিফাত, কুরবত, তায়াল্লুক্ব-নিসবত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক ত্বলব করে থাকি। সুবহানাল্লাহ! সেটাই হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, يا محمد صلى الله عليه وسلم انا وانت وما سواك خلقت لاجلك قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يا رب انت وما انا وما سواك تركت لاجلك. অর্থ: “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি এবং আপনি। আর আপনি ছাড়া যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছু আপনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার জন্যই সৃষ্টি করেছি। সুবহানাল্লাহ! জবাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে বারে এলাহী! শুধু আপনি, আমিও না। আপনি ছাড়া আর যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছুই তরক করেছি আপনার রেযমন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার লক্ষ্যে।” সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত হাদীছে কুদসী শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার মাঝে ফানা এবং বাক্বা ঠিক তেমনিভাবে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মাঝে ফানা এবং বাক্বা। সুবহানাল্লাহ! তাই উনাদের সম্মানিত অন্তর মুবারক দায়িমীভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে রুজু ছিলো এবং আছে। সুবহানাল্লাহ! এই বিষয়টিই স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে ‘তাখয়ীরের পবিত্র আয়াত শরীফ’ উনার মাধ্যমে। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং উপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অন্তর মুবারক দায়িমীভাবেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে রুজু ছিলো এবং আছে। সুবহানাল্লাহ! কাজেই যারা এই সম্মানিত আয়াত শরীফ নিয়ে চূ-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করবে এবং বলবে যে, উনাদের অন্তর মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে এবং অন্যায়ের দিকে রুজু হয়ে গেছে বিধায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে তাওবা করতে বলেছেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! তারা সর্বশেষ স্তরের কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী হবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! তাদেরকে ক্বতল করা ওয়াজিব। চতুর্থ আয়াত শরীফ উনার দ্বিতীয় অংশ উনার অর্থ ও তাফসীর বা ব্যাখ্যা وَإِنْ تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَإِنَّ اللهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيرٌ. অর্থ: “আর যদি আপনারা পরস্পর (মিলে) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন, তাহলে আপনারা কামিয়াবী হাছিল করবেন। (উনারা তো সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছেনই এবং কামিয়াবী হাছিল করেছেনই। সুবহানাল্লাহ!) নিশ্চয়ই যিনি খ¦ালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত বন্ধু। সুবহানাল্লাহ! স্বয়ং হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি, সমস্ত ছালেহীন বান্দা-বান্দী এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমতগার।” সুবহানাল্লাহ! শব্দার্থ: إِنْ تَظَاهَرَا যদি আপনারা পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করেন, অর্থাৎ আপনারা পরস্পর পরস্পরকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করেন তথা আপনারা পরস্পর মিলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন, مَوْلَاهُ উনার মাওলা বা বন্ধু, جِبْرِيلُ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম, صَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ ছালিহুল মু’মিনীন তথা পূণ্যবান মু’মিনগণ, الْمَلَائِكَةُ সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, بَعْدَ অতঃপর, ظَهِيرٌ সাহায্যকারী, খাদিম। তাফসীর বা ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا. لِتُؤْمِنُوا بِاللهِ وَرَسُولِهٖ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا. অর্থ: “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি, সৃষ্টি মুবারক করেছি শাহিদ তথা সাক্ষ্যদাতা, উপস্থিত, (হাযির-নাযির), সুসংবাদদানকারী এবং ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে। যাতে করে তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের প্রতি ঈমান আনতে পারো। তোমরা উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেও, উনাকে তা’যীম-তাকরীম মুবারক করো এবং উনার সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করো সকাল-সন্ধ্যা তথা অনন্তকাল দায়িমীভাবে।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা ফাত্হ শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৮-৯) এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার পরিপূর্ণ হাক্বীক্বী মিছদাক্ব হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ! হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে বেমেছাল সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দিয়েছেন সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কারো পক্ষে এরূপ বেমেছাল সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া কস্মিনকালেও সম্ভব হয়নি এবং সম্ভব হবেও না। যার কারণে উনারা সর্বোচ্চ কামিয়াবী হাছিল করেছেন। সুবহানাল্লাহ! উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক এক কথায় উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ! একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলেই হচ্ছেন উনাদের সম্মানিত খাদিম। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু বাত্বিল ফিরক্বার লোকেরা এবং যাদের ইলম-কালাম ও আক্বল-সমঝে ত্রুটি রয়েছে, তারা এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে বলে থাকে যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা নাকি পরস্পর মিলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাফরমানী করেছেন, বিরোধীতা করেছেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا . অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও মহিলা উনাদের জন্য জায়িয নেই তা অমান্য করা। আর যেই ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের আদেশ মুবারক অমান্য করে, নাফরমানী করে, (উনাদের বিরোধীতা করে) সে প্রকাশ্য গোমরাহে গোমরাহ।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৩৬) মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا অর্থ: “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের আদেশ মুবারক অমান্য করে, নাফরমানী করে, (উনাদের বিরোধীতা করে) তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তারা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।” (সম্মানিত সূরা জিন শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ২৩) তাহলে কি করে বলা যেতে পারে যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা পরস্পর মিলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করেছেন, উনার নাফরমানী করেছেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! যারা এরূপ বলবে, তার সর্বশেষ স্তরের কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে। পঞ্চম আয়াত শরীফ উনার অর্থ ও তাফসীর বা ব্যাখ্যা عَسَى رَبُّهُ إِنْ طَلَّقَكُنَّ أَنْ يُبْدِلَهُ أَزْوَاجًا خَيْرًا مِنْكُنَّ مُسْلِمَاتٍ مُؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَائِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَائِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَأَبْكَارًا. অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি আপনাদেরকে তালাক্ব দেন অর্থাৎ আপনাদেরকে রুখসত দেয়ার ব্যবস্থা করেন, তাহলে যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে আপনাদের থেকে উত্তম উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম পাল্টিয়ে দিবেন। উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আত্মসমর্পণকারিণী হবেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশ্বাসস্থাপনকারিণী হবেন, প্রত্যেকেই অত্যন্ত অনুগতা হবেন, প্রত্যেকেই তাওবাকারিণী হবেন, প্রত্যেকেই অত্যন্ত ইবাদাতকারিণী হবেন, প্রত্যেকেই অনেক রোযা রাখবেন, অনেকে অকুমারী এবং অনেকে কুমারী হবেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা তাহরীম শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১-৫) শব্দার্থ:إِنْ طَلَّقَكُنَّ যদি তিনি আপনাদেরকে তালাক্ব দেন, রুখসত দেয়ার ব্যবস্থা করেন, يُبْدِلَهُ তিনি উনাকে পরিবর্তন করে দিবেন, পাল্টিয়ে দিবেন, خَيْرًا উত্তম, مِنْكُنَّ আপনাদের থেকে, مُسْلِمَاتٍ আত্মসমর্পণকারিণী, مُؤْمِنَاتٍ বিশ্বাসস্থাপনকারিণী, قَانِتَاتٍ অনুগতা, تَائِبَاتٍ তাওবাকারিণী, عَابِدَاتٍ ইবাদাতকারিণী, سَائِحَاتٍ রোযাদার, ثَيِّبَاتٍ অকুমারী, أَبْكَارًا কুমারী। তাফসীর বা ব্যাখ্যা: এই সম্মানিত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে, যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাদেরকে তালাক্ব দেন, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে আপনাদের থেকে উত্তম উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম পাল্টিয়ে দিবেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো তালাক্ব দেননি এবং উনাদেরকে পাল্টিয়েও দেয়া হয়নি। সুবহানাল্লাহ! এর মাধ্যমে এটাই প্রমাণ করে দেয়া হলো যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের থেকে উত্তম কোন মহিলা মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে আর নেই। সুবহানাল্লাহ! আর এই কারণেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে তালাক্ব দেননি এবং উনাদেরকে পাল্টিয়েও দেয়া হয়নি। সুবহানাল্লাহ! সুতরাং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক এক কথায় উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ! কাজেই উনারা হচ্ছেন, مُسْلِمَاتٍ مُؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَائِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَائِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَأَبْكَارًا এই সমস্ত গুণ সম্পন্না। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন, مُسْلِمَاتٍ مُؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَائِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَائِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَأَبْكَارًا অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আত্মসমর্পণকারিণী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশ্বাসস্থাপনকারিণী, প্রত্যেকেই অত্যন্ত অনুগতা, প্রত্যেকেই তাওবাকারিণী, প্রত্যেকেই অত্যন্ত ইবাদাতকারিণী, প্রত্যেকেই অনেক রোযাদার, অনেকে অকুমারী এবং অনেকে কুমারী।” সুবহানাল্লাহ! হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা অবশ্যই অবশ্যই এই সমস্ত সম্মানিত ছিফত মুবারক সম্পন্না। যার কারণে উনাদেরকে তালাক্বও দেয়া হয়নি এবং পাল্টানোও হয়নি। সুবহানাল্লাহ! উনাদের মতো এরূপ উত্তম সম্মানিত ছিফত মুবারক সম্পন্না কায়িনাতের বুকে কোন মহিলা নেই। যার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, يَانِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ অর্থ: “হে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা নিসা আলাইহিন্নাস সালাম তথা হে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা অন্য কোন মহিলাদের মত নন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ, সম্মানিত আয়াত শরীফ : ৩২) সুতরাং সম্মানিত সূরা তাহরীম শরীফ উনার প্রথমোক্ত পাঁচখানা আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান মুবারক উনার খিলাফ কোন কিছুই বলা হয়নি; বরং উল্টো উনাদের হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান ও সম্মানিত পবিত্রতা মুবারক উনার বিষয়টিই স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু বাতিল ফিরক্বার লোকেরা এবং যাদের আক্বল, বুদ্ধি, সমঝ, ইলম-কালাম, তায়াল্লুক্ব-নিসবতে ত্রুটি রয়েছে, তারা আলোচ্য সম্মানিত আয়াত শরীফ উনাদের হাক্বীক্বতটা বুঝতে না পেরে এলোমেলো ব্যাখ্যা করেছে, ইসরাঈলী বর্ণনার কারণে তারা প্রতারিত হয়েছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! তারা বলে থাকে যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা না কি পরস্পর হিংসা করেছেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! অথচ যে হিংসুক সে তো ঈমানদারই হতে পারে না। যেটা সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, اِنَّ الْحَسَدَ ياكل الحسنات كما تاكل النار الحطب অর্থ: “নিশ্চয়ই হিংসা নেকীসমূহকে এভাবে বিনষ্ট করে দেয় যেভাবে আগুন লাকড়িকে জ্বালিয়ে দেয়।” একজন ওলীউল্লাহ বা খালিছ ঈমানদারের অন্তরে কোন প্রকার হিংস-বিদ্বেষ বা বদ স্বভাব থাকে না। কারো অন্তরে যদি হিংসা-বিদ্বেষ থাকে, সে কস্মিনকালেও ওলীউল্লাহ হতে পারে না, খালিছ ঈমানদারও হতে পারে না। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা তো হচ্ছেন একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ তামাম কায়িনাতবাসী সকলেরই মহাসম্মানিতা মাতা। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! তাহলে উনাদের অন্তরে কিভাবে হিংসা-বিদ্বেষ থাকতে পারে? না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! শুধু তাই নয়, তারা আরো বলে থাকে যে, উনারা নাকি পরস্পর দলাদলি করেছেন, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! ঝগড়া-ফাসাদ করেছেন, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! মিথ্যা কথা বলেছেন, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারক উনার খিলাফ কাজ করেছেন, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! উনার বিরোধীতা করেছেন, না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! আমানতের খিয়ানত করেছেন। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! এছাড়াও আরো নানা কুফরীমূলক বক্তব্য পেশ করে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ! যারা এরূপ বলবে, সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার ফতওয়া অনুযায়ী তারা সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, চিরজাহান্নামী, চিরমাল‘ঊন। তারা যদি মুসলমান বা ঈমানদার দাবি করে, তাহলে তাদের উপর মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং মুরতাদের শাস্তিও বর্তাবে এবং তাদের প্রাপ্য হলো চির লা’নত ও চির জাহান্নাম। আর যদি কাফির হয়, তাহলে তারা তাদের কুফরীকে আরো বৃদ্ধি করলো। তাদের শাস্তিও মৃত্যুদ-। তাদেরও প্রাপ্য হলো চির লা’নত ও চির জাহান্নাম। তারা ইবলীসের ন্যায়; বরং ইবলীসের চেয়েও চরম মাল‘ঊন। তাদের প্রত্যেককেই লা’নাতুল্লাহি আলাইহি বলা ফরয, ফরয এবং ফরয। আর যারা তাদেরকে সমর্থন করবে, তাদের উপরও একই হুকুম বর্তাবে। হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের পবিত্রতা মুবারক সম্পর্কে স্বয়ং যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, اِنَّـمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ اَهْلَ الْبَيْتِ وَيُـطَـهِّـرَكُمْ تَطْهِيْرًا. অর্থ: “হে সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে সমস্ত প্রকার অপবিত্রতা দূর করে আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে। অর্থাৎ তিনি আপনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৩৩) আরো উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনার শান মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন, لَيْسَ الذَّكَرُ كَالْأُنْثَى অর্থ: “তিনি এমন একজন সম্মানিতা মহিলা যে, উনার সমকক্ষ কোনো পুরুষও নেই।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আল ইমরান শরীফ, সম্মানিত আয়াত শরীফ : ৩৬) অর্থাৎ উম্মু রূহিল্লাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক এতো বেমেছাল যে, তিনি তো পূর্ববর্তী সমস্ত মহিলা উনাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক উনার অধিকারিণী; শুধু তাই নয়, উনার সমকক্ষ কোনো পুরুষও নেই। সুবহানাল্লাহ! উনার শান মুবারক-এ আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, وَإِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَامَرْيَمُ إِنَّ اللهَ اصْطَفَاكِ وَطَهَّرَكِ وَاصْطَفَاكِ عَلَى نِسَاءِ الْعَالَمِينَ. অর্থ: “আর যখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, হে হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে মনোনীত করেছেন, আপনাকে পবিত্রা করেছেন এবং সমস্ত আলমের সকল মহিলা উনাদের উপর আপনাকে মনোনীত করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আলে ইমরান শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৪২) অর্থাৎ উম্মু রূহিল্লাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম তিনি পূর্ববর্তী পুরুষ-মহিলা উনাদের সকলের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক উনার অধিকারিণী। সুবহানাল্লাহ! আর হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান মুবারক-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, يَانِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ অর্থ: “হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা নিসা আলাইহিন্নাস সালাম তথা হে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম! আপনারা অন্য কোনো মহিলাদের মতো নন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা আহযাব শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৩২) অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান সাইয়্যিদাতুনা হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম তিনিসহ সৃষ্টির শুরু থেকে এই পর্যন্ত যত মহিলা তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যতো মহিলা তাশরীফ মুবারক আনবেন উনাদের সকলের উপরে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব মুবারক, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক। সুবহানাল্লাহ! কাজেই উনারা কায়িনাতের অন্য কারো মতো নন। সুবহানাল্লাহ! তাহলে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল তা ভাষায় প্রকাশ করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। সুবহানাল্লাহ! এক কথায় উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার অধিকারিণী হচ্ছেন উনারা। সুবহানাল্লাহ! কাজেই উনাদের শান মুবারক উনার খিলাফ যারা বক্তব্য পেশ করবে, সম্মানিত শরীয়ত মুবারক উনার ফতওয়া অনুযায়ী তারা সবচেয়ে বড় কাট্টা কাফির, চিরজাহান্নামী, চিরমাল‘ঊন। তারা যদি মুসলমান বা ঈমানদার দাবি করে, তাহলে তাদের উপর মুরতাদের হুকুম বর্তাবে এবং মুরতাদের শাস্তিও বর্তাবে এবং তাদের প্রাপ্য হলো চির লা’নত ও চির জাহান্নাম। আর যদি কাফির হয়, তাহলে তারা তাদের কুফরীকে আরো বৃদ্ধি করলো। তাদের শাস্তিও মৃত্যুদ-। তাদেরও প্রাপ্য হলো চির লা’নত ও চির জাহান্নাম। তারা ইবলীসের ন্যায়; বরং ইবলীসের চেয়েও চরম মাল‘ঊন। তাদের প্রত্যেককেই লা’নাতুল্লাহি আলাইহি বলা ফরয, ফরয এবং ফরয। এদের ব্যাপারেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ سيدنا مولانا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَكْتُوْبًا بَيْنَ عَيْنَيْهِ اٰيِسٌ مِّنْ رَّحْـمَةِ اللهِ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ سيدنا مولانا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ كَافِرًا اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى بُغْضِ اٰلِ سيدنا مولانا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَـمْ يَشُمَّ رَائِحَةَ الْـجنَّةِ. অর্থ: “সাবধান! আর যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, ক্বিয়ামতের দিন তার দুই চোখের মাঝখানে লিখা থাকবে যে, সে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র রহমত থেকে বঞ্চিত। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে কাফির অবস্থায় মারা যাবে। নাঊযুবিল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে মারা যাবে, সে সম্মানিত জান্নাত উনার ঘ্রাণও পাবে না।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী ১৬/২৩, তাফসীরে কবীর ২৭/৫৯৫, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/২৩৯, তাখরীজু আহাদীছুল কাশ্শাফ ৩/২৩৮, নুজহাতুল মাজালিস ১/৩৬৫) আর অপরদিকে যাঁরা হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করবেন, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করবেন, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবার দিবেন, সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করবেন এবং উনাদের প্রতি সর্বোত্তম বিশুদ্ধ আক্বীদা ও সর্বোচ্চ হুসনে যন মুবারক পোষণ করবেন, নিঃসন্দেহে অবশ্যই অবশ্যই তাঁরা সর্বোচ্চ স্তরের ঈমানদার হবেন, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের হাক্বীক্বী রেযামন্দি-সন্তুষ্টি, মুহব্বত-মা’রিফাত, তায়াল্লুক্ব-নিসবত ও দায়িমী দীদার মুবারক লাভ করবেন এবং চরম-পরম কায়িময়াবী হাছিল করবেন। সুবহানাল্লাহ! ওই সমস্ত সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের জন্যই রয়েছে ইহকাল ও পরকালে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম সুসংবাদসমূহ। সুবহানাল্লাহ! উনাদের শান মুবারকেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, مَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سيدنا مولانا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ شَهِيْدًا اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سيدنا مولانا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ مَغْفُوْرًا لَّهٗ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سيدنا مولانا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ تَائِبًا اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سيدنا مولانا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ مُؤْمِنًا مُّسْتَكْمِلَ الْاِيْـمَانِ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سيدنا مولانا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَشَّرَهٗ مَلَكُ الْمَوْتِ بِالْـجَنَّةِ ثُـمَّ مُنْكَرٌ وَّنَكِيْرٌ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سيدنا مولانا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُزَفُّ اِلَـى الْـجَنَّةِ كَمَا تُزَفُّ الْعَرُوْسُ اِلـٰى بَيْتِ زَوْجِهَا اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سيدنا مولانا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَحَ اللهُ لَهٗ فِـىْ قَبْرِهٖ بَابَيْنِ اِلَـى الْـجَنَّةِ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سيدنا مولانا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَعَلَ اللهُ قَبْرَهٗ مَزَارَ مَلَائِكَةِ الرَّحْـمَةِ اَلَا وَمَنْ مَاتَ عَلـٰى حُبِّ اٰلِ سيدنا مولانا مُـحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَاتَ عَلَى السُّنَّةِ وَالْـجَمَاعَةِ. অর্থ: “যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি শহীদী মৃত্যু পাবেন। সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি তওবাকারী হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি পরিপূর্ণ ঈমানদার মু’মিন হিসেবে ইন্তেকাল করবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, উনাকে মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম তিনি অতঃপর হযরত মুনকার ও নকীর আলাইহিমাস সালাম উনারা সম্মানিত বেহেশত মুবারক উনার সুসংবাদ মুবারক দিবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, উনাকে এমনভাবে সুসজ্জিত করে জান্নাতে নেয়া হবে, যেমনভাবে কনেকে সাজিয়ে তার স্বামীর ঘরে নেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, উনার কবরে উনার জন্য সম্মানিত জান্নাত উনার দিকে দুটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত ব্যক্তি উনার কবরকে সম্মানিত রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যিয়ারতের স্থান বানাবেন। সুবহানাল্লাহ! সাবধান! যে ব্যক্তি মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক-এ ইন্তেকাল করবেন, তিনি সম্মানিত আহলু সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার উপর ইন্তেকাল করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী ১৬/২৩, তাফসীরে কবীর ২৭/৫৯৫, তাফসীরে হাক্কী ১৩/৭৯, তাফসীরে রূহুল বয়ান ৮/২৩৯, তাখরীজু আহাদীছুল কাশ্শাফ ৩/২৩৮, নুজহাতুল মাজালিস ১/৩৬৫) মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে হাকীক্বীভাবে মুহব্বত করার, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করার, উনাদের সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়ার, সম্মানিত ছানা-ছিফত মুবারক করার, উনাদের প্রতি সর্বোত্তম বিশুদ্ধ আক্বীদা ও সর্বোচ্চ হুসনে যন মুবারক পোষণ করার এবং উনাদের যারা শত্রু রয়েছে তাদেরকে দৃষ্টান্ত মূলক সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
http://al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=2&textid=14795


0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন