হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ৬ষ্ঠ ইমাম হচ্ছেন, সুলত্বানুল মাশায়িখ, ইমামুল মুহসিনীন, ইমামুস ছিদ্দীক্বীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক্ব আলাইহিস সালাম।
উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল, ফযীলত ও বুযুর্গী মুবরক রয়েছে। যা আমরা নিম্ন বর্ণিত উনার মুবারক কারামত উনার দ্বারা উপলব্ধি করতে পারবো।
একবার খলীফা মানছূর সে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার পরিকল্পনা করেছিলো।
নাউযুবিল্লাহ!
কারণ খলীফা মনছুর ছিলো দুষ্ট প্রকৃতির। সে দেখলো সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার প্রভাব প্রতিপত্তি অনেক বেশি।
কারণ সে সময়কার মাশহুর তথা প্রসিদ্ধ ব্যক্তিবর্গ সবাই উনার মুরীদ।
যেমন- হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহি, সুলত্বানুল আরিফীন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, রসায়নবিদ হযরত জাবির বিন হাইয়্যান রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আম-খাছ, আলিম-উলামা, ছূফী-দরবেশ সবাই উনার মুরীদের অন্তর্ভুক্ত।
তাই একদিন আব্বাসীয় খলীফা মানছুর তার সভাসদসহ খাদিম-খুদ্দামদেরকে নিয়ে পরামর্শ করলো কিভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করা যায়। নাঊযুবিল্লাহ!
সকলে বললো এ কাজটা করা তার ঠিক হবে না। তারপরও হিংসাবশতঃ সে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার পরিকল্পনা করলো। নাঊযুবিল্লাহ!
সে বললো- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে দাওয়াত করা হবে। উনি যখন দাওয়াতে আসবেন তখন মনছুর তার মাথার পাগড়িটি খুলে ফেললে বুঝতে হবে উনাকে শহীদ করতে হবে। নাউযুবিল্লাহ!
কথা অনুযায়ী সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে দাওয়াত করা হলো- উনিও দাওয়াতে আসলেন।
উজীর, নাজির, খাদীম, খুদ্দাম, সকলেইতো গভীর চিন্তিত, পেরেশান। ব্যাপারটা কি থেকে কি হয়ে যায়। দেখা গেলো উনি যখন তাশরীফ নিলেন তখন খলীফা মনছুর কাচুমাচু হয়ে, অত্যন্ত বিনীতভাবে, ভক্তিভরে উনাকে তার আসনে বসিয়ে বলতে লাগলো, ‘হুযূর! বেয়াদবী মাফ করবেন আমি আপনার কি খিদমত করতে পারি?
আপনি কি চান?’
তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহি সালাম তিনি বললেন, ‘আমাকে সংবাদ দিবে না, তুমি আমার ইবাদত-বন্দেগীতে ব্যাঘাত ঘটাবে না। এটাই আমি চাই।’
এরপর অত্যন্ত তা’যীম, তাকরীম উনার সাথে খলীফা মনছুর সে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনাকে উনার বাড়িতে পৌঁছে দিলো। পৌঁছে দিয়ে রাজপ্রাসাদে এসে সে বেহুঁশ হয়ে পড়লো।
বেহুঁশ হওয়ার কারণে তার তিন ওয়াক্ত নামায কাযাও হলো।
অতঃপর তার যখন হুঁশ ফিরে আসলো তখন তাকে উজীর, নাজির, খাদিম, খুদ্দামরা বললো ব্যাপারটা কি?
তখন খলীফা মনছুর বললো- সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি যখন তাশরীফ নিয়েছিলেন তখন সে উনার সাথে একটা বড় অজগর সাপও দেখতে পেয়েছিলো।
সাপটি বলতেছিলো, হে মনছুর! তুমি যদি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম উনার সাথে বেয়াদবী করো, তাহলে তোমার কোনো রক্ষা নেই। তোমাকে আমি ধ্বংস করে ফেলবো।
এটা দেখে সে উনাকে তা’যীম, তাকরীম করেছে, খিদমতের আঞ্জাম দিয়েছে এবং পরে ভয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়েছে।
উনার নছীহত মুবারক:
(১) নিজেকে হারাম বস্তু থেকে বাঁচাও, যা কিসমতে আছে তার উপর সন্তুষ্ট থাক; তবে ছুফী হতে পারবে।
(২) মনে রেখ মিথ্যাবাদী ভদ্র হয় না, হিংসুক আরাম পায় না, চরিত্রহীন নেতৃত্ব করতে পারে না।
(৩) দুশ্চরিত্রের সাথে চলাফেরা করিও না। তাহলে তোমার চরিত্র নষ্ট হতে সময় লাগবে না।
(৪) কারো গুণ দেখলে প্রশংসা করিও। দোষ দেখলে গোপন রাখিও এবং কেউ অন্যায় করিলে ক্ষমা করিও; তবেই তুমি নেককার মানুষ।
(৫) ক্রোধ-এর উৎপত্তি আগুন থেকে আর আগুন দ্বারাই দোযখ তৈরি করা হয়েছে। অতএব, সর্বদা ক্রোধ বর্জন কর।
(৬) পাঁচ প্রকার লোকের সাথে সংশ্রব রাখিও না :::
এক. মিথ্যাবাদী, কারণ মিথ্যাবাদীর কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দুই. কৃপণ, কারণ কৃপণ নিজ লাভের জন্য তোমার ক্ষতি করে বসবে।
তিন. নির্দয়, কারণ নির্দয় বিপদের সময় তোমার প্রতি দয়া দেখাবে না।
চার. কাপুরুষ, কারণ কাপুরুষ বিপদের সময় নিজ নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।
পাঁচ. ফাসিক, কারণ ফাসিকের নির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। সে নিজ স্বার্থে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে।
উনার মুবারক একটি স্বপ্ন:
আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি বলেন- ১৪৮ হিজরী সনের পবিত্র ১১ই রজবুল হারাম শরীফ পবিত্র জুমুয়াহ শরীফ উনার রাত্রে আমি যথারীতি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও যিকির আযকার করে ঘুমিয়ে পড়ি।
ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখতে পাই, আমি আলমে নাসুত থেকে (পৃথিবী হতে) ঊর্ধ্বারোহন করে আলমে মালাকুত এবং আলমে মালাকুত থেকে জাবারুতে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে এক বিশাল ময়দান দেখতে পেলাম। সেই ময়দানের এক পাশে মারওয়ারিদ পাথরের একটা তাবু টানানো।
সেখান থেকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালেক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার কাছে এসে বললেন, “হে হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম! আপনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ডাকছেন।
আমি সাথে সাথে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গেলাম। দেখলাম সমস্ত হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পবিত্র রূহ মুবারক সেখানে উপস্থিত আছেন। সুবহানাল্লাহ!
এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কাতারবন্দী হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। একটা খুব সুন্দর আসনের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসা অবস্থায় আছেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে দেখামাত্র বসার জন্য ইশারা করলেন। আমি বসলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাশে এসে বসলেন।
ইত্যবসরে দেখা গেল দুটি পবিত্র রূহ মুবারক এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ডান জানু মুবারক ও বাম জানু মুবারকে বসলেন। বসার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম! আপনি আজ থেকে তিনদিন পর আমার কাছে চলে আসবেন। আমি চাই আপনি জাবারুতের অবস্থা দর্শন করে তা আলমে নাসূতের মধ্যে লিপিবদ্ধ করেন।’
একথা বলার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আপনি কি জানেন এ মুবারক রূহ দুটি কার?
আমার ডান জানু মুবারকে যার রূহ মুবারক দেখতে পেলেন তিনি আমার থেকে পাঁচশত বৎসর পর পৃথিবীতে আগমন করবেন। তিনি হলেন গাউসুল আ’যম হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আমার বাম জানু মুবারকে যে রূহটি আছেন তিনি হলেন, হযরত আলী আহমদ ছাবের কালিয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার এ দুই খাছ মকবুল বান্দা দ্বারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অনেক খিদমত নিবেন।
তারপর পাশে বসে থাকা অবস্থায় হযরত সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনাদের বললেন, “আপনাদের পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ হওয়ার পর আমি আমার উম্মতের কথা ভাবি।
তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার এই দুই মাহ্বুব বান্দা দ্বারা আমাকে সুসংবাদ দান করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি উক্ত স্বপ্ন দেখার পর ঘুম থেকে জেগে উঠলাম এবং সকালে উঠে ‘কাশফুল গুয়ুব’ কিতাবে তা লিপিবদ্ধ করলাম।
এই ‘কাশফুল গুয়ুব’ কিতাব তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পূর্বেই লিখেছিলেন এবং সত্যিই তিনি তিনদিন পরে পবিত্র ১৪ই রজবুল হারাম শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।

0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন