728x90 AdSpace

  • Latest News

    পবিত্র লাইলাতুর রাগায়িব শরীফ উনার মহত্ত্ব ও বড়ত্ব

    رغائب (রগায়িব) শব্দ মুবারকটি رغيب উনার বহুবচন। যার অর্থ কাঙ্খিত বিষয়, প্রচুর দান। (মিছবাহুল লুগাত-২৯৮)
    পারিভাষিক বা ব্যবহারিক অর্থে- আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মুবারক রাত্রিতে উনার আম্মা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ কুদরতীভাবে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন সেই মুবারক রাতকে ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ বলা হয়।


    মধ্যরাতের পর থেকে ছুবহে ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত এই সময়ের মধ্যে তিনি তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন। যা তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত বা সময়। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে, “তাহাজ্জুদ নামায সমাপান্তে নিজ আহলিয়ার সাথে অবস্থান করা খাছ সুন্নত বা সর্বোত্তম সময়।”
    হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “তোমরা পবিত্র রজব মাস উনার প্রথম জুমুয়াহ শরীফ সম্মানিত রাতটি গাফলতির সাথে অতিবাহিত করো না। কারণ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ওই সম্মানিত রাত উনাকে ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ নামে আখ্যায়িত করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
    আর ওই মুবারক রাতটি যখন এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয় তখন আসমান-যমীনে যত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম আছেন উনারা সবাই পবিত্র কা’বা শরীফ-এ এবং উনার আশপাশে উপস্থিত হন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি সম্বোধন করে বলেন, ‘হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনাদের যা ইচ্ছা তা প্রার্থনা করতে পারেন। আমি অবশ্যই কবুল করবো।’ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা তখন বলেন, ‘হে মহান আল্লাহ পাক! আমাদের প্রার্থনা এই যে, যারা পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাসে রোযা রাখবে তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন।’ তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম।’ সুবহানাল্লাহ! (গুনিয়াতুত ত্বলিবীন ৩৩১)
    মুহইউস সুন্নাহ ওয়াশ শরীয়াহ, মাহিউল বিদয়াত ওয়াদ দলালাহ, কাশিফুল আসরার খফী ওয়াল জলী হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব, “বারাহীনুল ক্বতইয়াহ ফী মাওলিদী খাইরিল বারীয়াহ” উনার ৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ উনাকে পবিত্র লাইলাতুল বরাত ও পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর উনাদের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাসম্পন্ন বলে ফতওয়া দিয়েছেন। কারণ পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ১ম জুমুয়াহ শরীফ রাতে যেরূপ রহমত, বরকত, বুযূর্গী, সম্মান, দয়া-দান, ইহসান ও সৌভাগ্য সারা কায়িনাত এবং মু’মিনগণ পেয়ে থাকেন, এবং তাদের উপর বর্ষিত হতে থাকে তা অতীতে কোনো সময়ে হয়নি; এমনকি ক্বিয়ামত পর্যন্ত অন্য কোনো সময় তা হবে না। সুবহানাল্লাহ!
    এ কারণে এই পবিত্র রাত (পবিত্র লাইলাতুর রাগায়িব শরীফ)কে, পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর, পবিত্র লাইলাতুল বরাত হতে অত্যধিক ফযীলতপূর্ণ বলে গণ্য করতে হবে। এ মতের সমর্থনে হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ উনারা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া শরীফ, ১/২৬ পৃষ্ঠা)

    মুহইউস সুন্নাহ ওয়াশ শরীয়াহ, মাহিউল বিদয়াত ওয়াদ দলালাহ, কাশিফুল আসরার খফী ওয়াল জলী হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘বারাহিনুল ক্বতইয়াহ ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়াহ’ উনার ৭৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করেছেন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে যে, এই সম্মানিত রাতে মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে ও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের জগতে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, পবিত্রতম নূর মুবারক দ্বারা সারা কায়িনাত (জগৎ) আলোকিত করে দাও। তাই আসমান-যমীনের সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মহাখুশিতে বিভোর হয়ে গিয়েছিলেন। সর্বোত্তম জান্নাত জান্নাতুল ফিরদাউসের দরজা খুলে দেয়ার জন্য জান্নাতের দ্বাররক্ষী হযরত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সারা কায়িনাতকে বিভিন্ন প্রকার খুশবু দ্বারা সুগন্ধিযুক্ত করার হুকুম ছিল। আকাশের সকল স্তরে এবং পৃথিবীর সকল ঘরে ঘরে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, ‘নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মুবারক রাতে উনার আম্মা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ নিবেন। তিনি তো সবকিছুর মূল। অর্থাৎ উনাকে উপলক্ষ করে সারা কায়িনাতের সবকিছুই সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তিনি সব রহমত, বরকত, মাগফিরাত সাকীনাহ, সম্মান, মর্যাদা-মর্তবা, নূর, গুপ্ত রহস্যাবলী, হাক্বীক্বত, মা’রিফাত, মুহব্বত জাহির বা প্রকাশিত হওয়ার মূল উৎস। গোটা সৃষ্টি জগৎ উনার পবিত্র অজুদ পাক বা মুবারক অস্তিত্ব মুবারক হতে সৃষ্টি হয়েছে এবং যিনি সমস্ত আদম জাতির মূল। তিনি অচিরেই দুনিয়াতে মুবারক তাশরীফ নিবেন। সারা কায়িনাতকে তিনি সম্মান-মর্যাদা দ্বারা খুশি ও আনন্দিত করবেন।’ সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া শরীফ, ১/১৯, সীরাতে ইবনে হিশাম, ১/১৪৫)


    মুহইউস সুন্নাহ ওয়াশ শরীয়াহ, মাহিউল বিদয়াত ওয়াদ দলালাহ, কাশিফুল আসরার খফী ওয়াল জলী হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে যে, ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ এবং ঊষাকালে সকল মূর্তি উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াতে মুবারক তাশরীফ আনয়নের দিন যেভাবে শয়তানগুলোকে আকাশে উঠার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ উনার মধ্যেও ঠিক সেই ধরনের অসংখ্য-অগণিত আশ্চর্যজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। দুনিয়ার এমন কোনো বাদশাহের সিংহাসন ছিল না, যা ওই রাতে উল্টে পড়েনি। উক্ত রাতে প্রতিটি ঘর আলোকময় হয়েছিল। সেই রাতে সকল জীব-জন্তু কথা বলতে পেরেছিল। এমনকি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের পশু-পাখিরা পর্যন্ত খুশি ও সুসংবাদ বাণী পরস্পর বিনিময় করেছিল। (আল বারাহীনুল ক্বতইয়াই ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়াহ ৭৯)
    তিনি সেখানে আরো উল্লেখ করেন যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আম্মা আলাইহাস সালাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক আনার পূর্বে কুরাইশরা বড় কঠিন দুর্ভিক্ষ ও অভাবে কষ্ট পেতে ছিল। বৃষ্টির অভাবে গাছের পাতাগুলো শুকিয়ে গিয়েছিল। আর সমস্ত জীব-জন্তু এবং গৃহপালিত পশু-পাখিগুলো অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
    কিন্তু আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক আনার সাথে সাথে আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল। মহান আল্লাহ পাক তিনি মুষলধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করলেন। রহমত উনার বৃষ্টি সকল গাছপালা, তৃণলতাকে নতুনভাবে সবুজ ও তরুতাজা করে দিলো। সুবহানাল্লাহ! (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া শরীফ, ১/১৯, সীরাতে হালাবিয়া ১/৪৮, বারাহীনুল ক্বতইয়াহ ৮১, সীরাতে ইবনে হিশাম, ১/১৪৫)

    মুহইউস সুন্নাহ ওয়াশ শরীয়াহ, মাহিউল বিদয়াত ওয়াদ দলালাহ, কাশিফুল আসরার খফী ওয়াল জলী হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘আল বারাহীনুল ক্বতইয়াই ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়াহ’ কিতাবে আরো উল্লেখ করেছেন যে- আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “আমি সে সময় ঘুম ও জাগ্রতের মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এমন সময় একজন লোক এসে আমাকে বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম! আপনি মানব জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব উনাকেই ধারণ করেছেন। উম্মে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তিনি বলেন- এর পূর্বে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনাকে যে আমি ধারণ ও গ্রহণ করেছি তা বুঝতে পারিনি। সুবহানাল্লাহ!
    অপর বর্ণনায় এসেছে, সমস্ত সৃষ্টির সর্বোত্তম ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার পরেই উনার স্থান উনাকেই আপনি মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি আরো বলেন, সেই দিনই আমার বিশ্বাস হয়েছে যে- আমি সন্তানসম্ভাবা। (আল বারাহিনুল ক্বতইয়াহ, ৮৪)
    হযরত আবূ নাঈম ইস্পাহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা মাতা উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণের দিনের নিদর্শন হচ্ছে যে, সেই মুবারক রাতে কুরাইশদের সমস্ত গৃহপালিত পশুগুলি একটি অন্যটির নিকট বলাবলি করেছিল যে, পবিত্র কা’বা শরীফ উনার রব উনার কসম! এই রাতে এমন একজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম উনার খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক এনেছেন। যিনি হচ্ছেন- সমস্ত কায়িনাতের ইমাম এবং দুনিয়াবাসী সকলের আলোর দিশারী তথা পথপ্রদর্শক। সুবহানাল্লাহ! (আল বারাহীনুল ক্বাতইয়াহ ৮৩)
    http://www.al-ihsan.net/FullText.aspx?subid=1&textid=10850
    • Blogger Comments
    • Facebook Comments

    0 মন্তব্য(গুলি):

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Item Reviewed: পবিত্র লাইলাতুর রাগায়িব শরীফ উনার মহত্ত্ব ও বড়ত্ব Rating: 5 Reviewed By: Baitul Hikmah
    Scroll to Top